পুতিনের বিরুদ্ধে তথ্যযুদ্ধ চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েনের পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে মস্কো হামলা চালাতে যাচ্ছে বলে প্রতিনিয়ত তথ্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রেমলিন হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও আক্রমণের পরণতি নিয়ে প্রায়ই হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার পরিবর্তে বিশ্বকে সম্ভাব্য হামলার উচ্চ সতর্কতায় রেখে মস্কোর বিরুদ্ধে বেপরোয়া তথ্যযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করে রাশিয়া। এরপর তাদের বিরুদ্ধে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রতিপক্ষ রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনকে চাপে রাখতে এবং মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায়। তাই মস্কোর দাবিকে মিথ্যা হিসেবে তুলে ধরে তারা সতর্ক করে যাচ্ছে, হুমকিটা আসছে। বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে নতুন করে আরও সাত হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। যদিও ক্রেমলিন দাবি করেছে সীমান্তে মোতায়েন থাকা কিছু সেনা ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে। যাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার বাইডেন বলেছেন, একটি পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়ে আক্রমণের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই দাবি সর্বশেষ তাসের চাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। পুতিন যে কোনো সময় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত- যুক্তরাষ্ট্রের এই সরকারি দাবি নিয়ে খোদ ওয়াশিংটনেরও কিছু মানুষের সন্দেহ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক বার্তা জোরাল করে যাচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এটি ন্যাটোর মিত্রদের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সরকারের মধ্যে বিভেদ বা শূন্যস্থান তৈরি হতে পারে। ওয়াশিংটনের এই ধরনের চাপ অবশেষে পুতিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
পুতিন শুরু থেকে বলে আসছেন, তার দেশ যুদ্ধ চায় না। তারা ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য হতে দেবে না, এটি তাদের প্রধান দাবি। তাই তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগকে প্রাধান্য দিতে হবে পশ্চিমাদের।
তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়। এটি পুতিনকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি কিছু মার্কিন কর্মকর্তার সন্দেহ, এতে রুশ প্রেসিডেন্টের 'যুদ্ধের মানসিকতা বাড়তে পারে।'
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের পর ইউক্রেন সংকটই ইউরোপের সবচেয়ে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। এই ইস্যু ঘিরে ওই মহাদেশে নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগ বাড়ছে। এমনকি সংঘাত শুরু হলে মোকাবিলার বিষয় নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত তারা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউক্রেনে সেনা না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারা ন্যাটোর মিত্রদের সমর্থন দিয়ে পূর্ব ইউরোপে সেনা ও সামরিক যান পাঠিয়েছে। এখন রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ফিরে আসার পরিণতি খুবই বেদনাদায়ক হবে। এটি গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির দাম বাড়াবে, যা শুধুই দুর্দশা বাড়াবে। সোভিয়েতের পতনের পর এমন পরিস্থিতিই ন্যাটোর জন্য ভয়াবহ পরীক্ষায় পরিণত করেছে।
রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে উত্তেজনা কমলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, এখনও তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাহার হয়নি। পুতিন যে কোনো সময় এটি বাড়াতে পারেন।
বাস্তবে পুতিনের চরিত্র মূল্যায়ন করা কঠিন। কারণ তিনি বিভিন্ন অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন তৈরি করেন। তিনি বিভিন্ন পক্ষের বিভেদগুলো পর্যালোচনা করে পশ্চিমা শক্তিকে আক্রমণ করেন। এটি ইউরোপে একটি আসন্ন বিপজ্জনক যুগের সূচনা করতে পারে।
হাউস আর্মস সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাককাউল বলেন, রুশ নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই খারাপ। তবে আমি মনে করি, তারা একটি অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এখানে ভয়ংকর সত্য হচ্ছে- রুশ সেনারা প্রস্তুতি নিয়ে উঠবে, যা দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাপ প্রচারের অভিযান চালাতে যেতে পারেন পুতিন। এটিই পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবে এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য রাশিয়ার কাছে চুক্তির জন্য যাবে। যার কারণে মস্কোকে অবশ্য উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এতে পুতিনের দর কষাকষির শক্তি বাড়বে। ভবিষ্যতে এটি ইউক্রেনের ভাগ্য নিয়ে সমঝোতায়ও রাশিয়াকে সুবিধা দেবে।