English Version
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৭:২০

ভুল কৌতুক বললেই গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক
ভুল কৌতুক বললেই গ্রেপ্তার

গত মাসে গ্রেপ্তার হন নলিন যাদব। তার অপরাধ তিনি কৌতুক বলেছিলেন। একই অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরও চার জন।

প্রায় দুই মাস কারাগারে থাকা নলিন বলেন, ‘কেন ও কিভাবে এটি ঘটলো আমি বুঝতেই পারিনি। আমি ঘুমাতে কিংবা খেতে পারতাম না। আমাকে উদ্বেগ গ্রাস করে নিয়েছিল।’

এক কমেডি শোতে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছিল নলিনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। আদালত থেকে তারা জামিন পেয়েছেন। এখন বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

ভারতে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কৌতুক বলা বা সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মীয় বিশ্বাস অবমাননা করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারে। দেশটির ঔপনিবেশিক যুগের আইনগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের সমালোচকদের দমন এবং সেন্সরশিপ আরোপকে উত্সাহিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। একই সময়ে, বিজেপির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার সাথে মিল রয়েছে এমন চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো অন্যদের নিয়ে কটূক্তি করলেও কর্তৃপক্ষের চোখ বন্ধ করে রাখছে।

পহেলা জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অনুষ্ঠান করতে যান স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকি। ওইদিন তার সঙ্গে ছিলেন এডউইন অ্যান্থনি, প্রকার ব্যাস, প্রতীম ব্যাস ও নলিন যাদব। অনুষ্ঠানে ছিলেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মালিনী লক্ষ্মণ সিং গউরের ছেলে একলব্য। বিজেপির বিধায়কের ছেলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও হিন্দু দেব-দেবী নিয়ে মুনাওয়ার অশালীন মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় , মুনাওয়ার ফারুকির অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই তাকে টেনে হিঁচড়ে সেখান থেকে নিয়ে যায় একলব্যর ‘হিন্দ রক্ষক’ সংগঠনের সদস্যরা। পরের দিন সকালে পুলিশ এসে ফারুকিসহ পাঁচ কমেডিয়ানকে গ্রেপ্তার করে।

তিনবার ফারুকির জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও গ্রেপ্তারির পর থেকেই দেখা গিয়েছিল হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান করার কোনও প্রমাণই নেই ফারুকির বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত ৫ ফেব্রুয়ারি ফারুকি জামিন পান। কিন্তু যাদবকে জামিনের জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয় যাদবকে।

যাদবদের আগে গত বছরের নভেম্বরে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন হিন্দু কৌতুক অভিনেতা বীর দাস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভারতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়া ও বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৌতুক বলেছিলেন। বীরের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল বিজেপি। 

২০২০ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট কৌতুক অভিনেতা কুনাল কামরার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বিচার বিভাগ ও বিচারকদের অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। তিনি টুইটার পোস্টে, তিনি ডানপন্থি বক্তাদের ব্যাপারে আদালতের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হলে, কামরার ছয় মাসের জেল ও জরিমানা হতে পারে।

ভারতে বাক স্বাধীনতার গলা মোদি আমলে রীতিমতো চেপে ধরা হয়েছে। উদীয়মান মুসলিম কৌতুক অভিনেতা পারভেজ হাসান জানান, ২০১৪ সালে মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশ আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পরের বছর ২০১৫ সালে ৩০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হয়েছে। ভারতীয় মানবাধিকার আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, যে কেউ সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখন একটি সমাজ ব্যঙ্গ সহ্য করতে পারে না, তখন এটি এমন একটি সমাজে পরিণত হয় যেটি তার সাংবিধানিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। কৌতুক অভিনেতাদের মামলা বাক স্বাধীনতার বাইরে এবং এটিকে তাদের জীবিকা অর্জনের অধিকারের লঙ্ঘন।’