মহামারি করোনার মধ্যেও বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারে। প্রতিদিন গড়ে তাদের সম্পদ বেড়েছে ১৩০ কোটি ডলার। যেখানে একই সময়ে বিশ্বে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ১৬ কোটি মানুষ। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। মহামারির প্রায় দুই বছরে ব্যাপক ভাবে ব্যাহত বৈশ্বিক বাণিজ্য। সংক্রমণ বাড়ার সাথে বিভিন্ন দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র ও বেকারত্বের হার।

ঠিক এই সময়ে করোনা যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর জন্য। আগে এই ধনীদের সার্বিক সম্পদ ৭০ হাজার কোটি ডলার থাকলেও, করোনার মধ্যেই তা ছাড়িয়েছে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার। ধনী-দরিদ্রের এই ব্যবধান বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ফেলছে, বলছেন বিশ্লেষকরা।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের বরাতে অক্সফামের প্রতিবেদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী হিসেবে- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, বেরনাহ আরনোহ ও পরিবার, বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, ল্যারি পেইজ, সের্গেই ব্রেইন, মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ বলমার ও ওয়ারেন বাফেটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে।

যেখানে প্রতিদিন ১৩০ কোটি ডলার করে সম্পদ বেড়েছে এই ১০ ধনীর। মহামারিকালে যে পরিমাণ সম্পদ ধনীদের বেড়েছে, গত ১৪ বছরে সেই পরিমাণ সম্পদ বাড়েনি।

তবে এই হারে সম্পদ বৃদ্ধি বিশ্বে অর্থনৈতিক অসমতা বাড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছে অক্সফাম। মহামারিতে বিশ্বে ১৬ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, বলছে সংস্থাটি। আর এই বৈষম্যের ফলে চিকিৎসা সংকট, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব পড়ছে।

মহামারি শুরুর পর যৌথভাবে তাদের মূলধন ৭০০ বিলিয়ন বা সাত লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে দেড় ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। তবে তাদের সবার সম্পদ সমানভাবে বাড়েনি, যেমন ইলন মাস্কের সম্পদ ১০০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে বিল গেটসের সম্পদ বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে করা অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগের অভাব, ক্ষুধা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতি চার সেকেন্ডে একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।

কোভিড মহামারির পর নতুন করে ১৬ কোটি মানুষের দৈনিক জীবনযাপনের ব্যয় সাড়ে পাঁচ ডলারের নিচে নেমে গেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে দিনে সাড়ে পাঁচ ডলার খরচ করার সামর্থ্যকে দারিদ্র্যসীমা হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ব ব্যাংক।

২০২০ সালে শেয়ারের দাম ৭৪৩ ভাগ বাড়ায়, এক বছর আগেই বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় উঠে আসে টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। এই দুই বছরে তার সম্পদ ১ হাজার ১৬ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪২০ কোটি ডলারে।

একই সময়ে অ্যামাজানের জেফ বেজোসের সম্পত্তি ৬৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ২৬০ কোটি ডলার। পাশাপাশি মাইক্রোসফটের বিল গেটসের ৩১ শতাংশ এবং ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গের সম্পদ বেড়েছে ১০১ ভাগ।