যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য নয়া পাসপোর্ট

বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র সরকার তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য প্রথমবারের মতো নতুন পৃথক পাসপোর্ট চালু করেছে। দেশটিতে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকারের স্বীকৃতির বিষয়ে সরকারের এই উদ্যোগকে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।গত জুন মাসেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে কানাডা, জার্মানি, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কয়েকটি রাষ্ট্র এ বিষয়টি পাসপোর্টে নতুন একটি অপশন হিসেবে যুক্ত করেছিল। এরমধ্য দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাক্তিদের আর নিজেদের পুরুষ বা নারী দুটি অপশনের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিতে হবে না। এ নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, যারা মার্কিন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন, তাদের এই এক্স লিঙ্গ ব্যবহার করে আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের ‘এক্স জেন্ডারভুক্ত’ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর সীমিত সংখ্যক পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। আগামী বছর থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিক প্রথম বিশেষ ক্যাটাগরির এই পাসপোর্ট পেয়েছেন, তা জানায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা লাম্বডা লিগ্যাল জানিয়েছে, তাদের সেবা নিচ্ছেন ডানা জিম নামের ব্যাক্তিই প্রথম এই পাসপোর্ট পেয়েছেন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ডানা বলেন, আমার নতুন পাসপোর্ট দেখে আমার চোখ পানিতে ভরে যায়। সেখানে লিঙ্গের স্থানে এক্স দেখতে পাই। ডানা একজন উভলিঙ্গ নৌবাহিনী সদস্য। তিনি আরও জানান, প্রায় ৬ বছর চেষ্টার পর তিনি তার পাসপোর্টে এক্স লিঙ্গ যুক্ত করতে পেড়েছেন। এরফলে তাকে আর পুরুষ বা নারী হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে হবে না।অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রই যে প্রথম এই বিশেষ পাসপোর্ট চালু করল- এমন নয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেপাল ও কানাডায় বেশ আগে থেকেই তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের পৃথক পাসপোর্ট দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের পৃথক পাসপোর্ট ইস্যু করা দেশের সংখ্যা পৌঁছালো মাত্র ৫ টিতে।উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কলরাডোর একটি আদালতে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনদের জন্য পৃথক পাসপোর্ট চেয়ে মামলা করেছিলেন ডানা জিম। মামলাটি এখনও বিচারাধীন আছে।মামলা করার সময় সাংবাদিকদের জিম বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রজন্মের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা যেন তাদের প্রাপ্য অধিকারসহ পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা পায়, সেজন্যই পৃথক পাসপোর্ট চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। তবে ডানা আদৌ পাসপোর্ট পেয়েছেন কি না, তা এখনও কোনো সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেননি।যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার আদায় বিষয়ক বিশেষ কূটনৈতিক দূত জেসিকা স্টার্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, নারী ও পুরুষের বাইরেও মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয় যে বৈচিত্রময়, সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তার স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।তিনি বলেন, ‘যখন একজন ব্যক্তি তার পরিচিতি বিষয়ক তথ্যে (আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট) নিজের সত্যিকারের পরিচয় দেখতে পান, নিঃসন্দেহে এটি তার জন্য অনেক মর্যাদার একটি ব্যাপার।’এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরসমূহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শক্তিশালী হচ্ছে। অনেক দেশের সরকারও এই শ্রেনীর মানুষদের অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের পক্ষে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশও তাদের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য পৃথক পাসপোর্ট চালু করবে।