English Version
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ১৩:৫৪

রোহিঙ্গা ফেরাতে চলতি সপ্তাহেই ‘চুক্তি’: সু চি

অনলাইন ডেস্ক
রোহিঙ্গা ফেরাতে চলতি সপ্তাহেই ‘চুক্তি’: সু চি

রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়নে মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টর নেত্রী অং সান সু চি। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন ‘আসেম’র দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ আশার কথা জানান।

তিনি বলেন, বিশ্বই এখন বড্ড অস্থিতিশীল ও সংঘাতের মুখোমুখি। কারণ অবৈধ অভিবাসীর কারণে সন্ত্রাস বাড়ছে। যার শিকার মিয়ানমারও। খবর- রয়টার্সের।

তবে এ সঙ্কটের সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী স্টেট কাউন্সেলর।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির এক ডজন পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলার জেরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে সেনাবাহিনী। অভিযান শুরুর পর থেকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে এখন পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা চালিয়েছে।

মিয়ানমারের রাজধানী নাইপেদোতে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে সোমবার থেকে দুই দিনব্যাপী আসেম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে সাইড লাইন বৈঠকে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর আসেম নেতারা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালের দিকে বৈঠক শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা নীতিমালা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে রাখাইন সঙ্কট নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেন। আলোচনায় মিয়ানমার, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, এস্তোনিয়া, জার্মানি, মাল্টা, রাশিয়া, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ওই অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। পরে ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে নিরাপদে ফেরাতে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছবি তোলার পর ইইউর এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন,‌ ‘শরণার্থীদের (রোহিঙ্গা) নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা আছে। এই প্রক্রিয়ায় ইইউর সমর্থন রয়েছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে পাশে থাকবে ইইউ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় রাখাইনে নৃশংস হত্যা, গণধর্ষণের অভিযোগ করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, আমরা এটা বলতে পারবো না, আসলেই সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না।

রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‌বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার (২২ নভেম্বর) এবং বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে গত মাস থেকেই দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেছেন।

‘আমরা আশা করছি, শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর মাধ্যমে যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে তাদের নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হবে।’ 

সাংবাদিকদের মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের এ নেত্রী আরও বলেন, বিশ্বই এখন বড্ড অস্থিতিশীল ও সংঘাতের মুখোমুখি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীর কারণে সন্ত্রাস বাড়ছে। যার শিকার মিয়ানমারও।’

সু চি অভিযোগ করেন, ‘তার দেশ লাখ লাখ অবৈধ মুসলিমকে বের করে দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে সমালোচনার শিকার হয়েছে।’

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিলেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করেননি শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়নি এবং সেদেশের জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর সরকারি তালিকাতেও নেই তারা।