English Version
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৯:১৩

সু চির ভাষণে কে কী বললেন?

অনলাইন ডেস্ক
সু চির ভাষণে কে কী বললেন?

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন ও নীপড়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বললেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি।

দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন। টেলিভিশনে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বললেন, রাখাইনে সবার দুর্ভোগ গভীরভাবে অনুভব করে তার সরকার। সেখান থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে সরকার উদ্বিগ্ন।

তবে সু চির এই ভাষণকে অসম্পূর্ণ বলছেন মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্ব নেতারা। বিশেষ করে রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে কিছু না বলায় অং সান সু চি ও তার সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

সু চির ভাষণের পর এএফপি বলছে, সু চির এসব কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, সু চি তার ভাষণে সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি তার বক্তব্যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আক্রান্ত লোকজনকে দোষারোপ করেছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আজকের ভাষণে সু চি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ও তার সরকার রাখাইনের সহিংসতা বিষয়ে বালুতে মাথা গুঁজে রেখেছেন। তিনি বরং তার বক্তব্যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদেরই দোষারোপ করেছেন। 

সু চি পরিস্থিতি দেখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যে আহ্বান জানিয়েছেন, সে ব্যাপারে অ্যামনেস্টি বলছে, মিয়ানমারের যদি কিছু লুকানোর না থাকে, তাহলে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান কমিটিকে তদন্তের জন্য দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হোক।

মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান বলেছেন, রাখাইনে যেসব সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা খতিয়ে দেখতে হলে ঘটনাস্থলে যেতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন দেশটিতে পূর্ণভাবে অবাধে প্রবেশের নিশ্চয়তা। এই সংকটের বিষয়ে দ্রুতই দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন সু চির কিছু বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মিয়ানমার নেত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ করেন নি জানিয়ে রবার্টসন বলেন, ‘গেল ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে যদি রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে গত দু’সপ্তাহে আমরা সেখানে যেসব গ্রাম পুড়ে যেতে যেতে দেখেছি, সেগুলোতে কারা আগুন দিচ্ছে?’

সু চির বক্তব্যে সংশয় প্রকাশ করে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের কর্মকর্তা পল এডওয়ার্ডস বলেছেন, ‘আমাদের কেউই আসলে জানি না রাখাইনে কী ঘটছে। কারণ আমরা সেখানে যেতে পারছি না।’

পল এডওয়ার্ডস আরো বলেন, মাত্র তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন। জাতিসংঘের তরফে সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে সংঘের প্রধান এই অভিযান বন্ধে অং সান সু চির হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ফলে সু চি আজ কী বলেন সেদিকে সবারই তীব্র আগ্রহ ছিলো।

সু চির ভাষণের পরপরই জাতিসংঘ মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে তাদের কর্মকর্তাদের মিয়ানমারে গিয়ে অবাধে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে আসলেই কী ঘটছে, সেটা তাদের কর্মকর্তারা ‘নিজের চোখে’ দেখতে চান। যদিও সু চি তার ভাষণে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছেন।

গেল তিন সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে গত মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এবিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিলো। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তদন্তকারীদের সেদেশে যেতে দেয়নি। সু চির ভাষণের পর জাতিসংঘের তরফে আবারো এই একই দাবি জানানো হয়েছে।

অপরদিকে, রাখাইন রাজ্য সরকারের সেক্রেটারি তিন মঙ সোয়ে কিন্তু সু চির ভাষণকে অত্যন্ত ‘স্বচ্ছ’ উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছেন। তবে রাখাইনে মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি যেসব অঙ্গীকার করেছেন সে ব্যাপারে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন।

মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং বলেছেন, ‘চীনের অবস্থান খুব পরিষ্কার। রাখাইনে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে আমরা তাকে সমর্থন করছি।’

মিয়ানমারে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই এ লিস্তোপাদভ বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযান, গণহত্যা- এসবের নিন্দা জানানোর মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।’

রাখাইনে চলমান দমন-পীড়নের মুখে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সে বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি সু চি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই মিয়ানমার ও সু চির ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।