English Version
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০৬:১৫

চীন, রাশিয়া আর ভারতের অস্ত্রে মরছে রোহিঙ্গা!

অনলাইন ডেস্ক
চীন, রাশিয়া আর ভারতের অস্ত্রে মরছে রোহিঙ্গা!

চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসরাইল ও ইউক্রেনের দেওয়া অস্ত্রে রাখাইনে ‘জাতিগত গণতহ্যা’ চালাচ্ছে মিয়ানমার। এর স্বপক্ষে পরিসংখ্যান তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা।   প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসরাইল ও ইউক্রেন। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হয় মিয়ানমার। এরপর অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে শক্ত হাতে দেশটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০১২ সালে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রূপান্তর হয় মিয়ানমারে। তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দেশটির ওপর ইইউ’র অস্ত্র আমদানি-রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে গত ২৬ বছরের মধ্যে মিয়ানমারের কাছে সবচেয়ে বেশি ১২০টি বিমান বিক্রি করেছে চীন। এরপরই আছে রাশিয়ার অবস্থান, দেশটি ৬৪টি বিমান বিক্রি করেছে। এছাড়া পোল্যান্ড ৩৫টি, জার্মানি ২০টি, সাবেক যুগোস্লাভিয়া ১২টি, ভারত ৯টি, সুইজারল্যান্ড তিন ও ডেনমার্ক মিয়ানমারের কাছে একটি করে বিমান বিক্রি করেছে।

একই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের কাছে সর্বাধিক ৬৯৬টি সাঁজোয়া যান বিক্রি করেছে চীন। এরপরই আছে ইসরাইলের অবস্থান, দেশটি মিয়ানমারের কাছে সাঁজোয়া যান বিক্রি করেছে ১২০টি। এছাড়া ইউক্রেন ৫০টি ও ভারত ২০টি সাঁজোয়া যান বিক্রি করেছে।

মিয়ানমারের কাছে সর্বাধিক দুই হাজার ৯৭১টি ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রিতে দেশটির পরেই আছে চীন, এক হাজার ২৯টি। এছাড়া বেলারুশ ১০২, বুলগেরিয়া ১০০ ও ইউক্রেন মিয়ানমারের কাছে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে।

উল্লেখিত সময়ের মধ্যে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি ১২৫টি কামান কিনেছে মিয়ানমার। এছাড়া মিয়ানমারের কাছে এই সময়ে সার্বিয়া ১২০টি, রাশিয়া ১০০টি, ইসরাইল ২১টি, উত্তর কোরিয়া ১৬টি ও ভারত ১০টি কামান বিক্রি করেছে।

এছাড়া মিয়ানমার নৌ বাহিনী সবচেয়ে বেশি ২১টি নৌ তরী কিনেছে চীনের কাছ থেকে। আর ভারত ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার কাছ তিনটি করে তরী কিনেছে।

প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক দশকে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের নির্যাতন বেড়ে গেছে। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি সেনা ছাউনিতে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের’ হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ অন্তত ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ নামে একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আর নির্যাতনের মুখে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত গণহত্যা’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তিত্ব রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংসতার নিন্দা জানিয়েছে। তারা অবিলম্বে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। 

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও প্রস্তাব করেছে। মিয়ানমারকে অবিলম্বে সেনা অভিযান স্থগিত ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বুধবার তার ওই আহ্বানের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অতিরিক্ত সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়।

তবে নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তারা সরাসরি রাখাইনে মিয়ানমারের অভিযানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এর আগে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার ছুটে গিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি’র সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযানের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে।

আন্তর্জাতিক সব চাপ উপেক্ষা করে অবশ্য শুরু থেকেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে আসছে। উল্টো দাবি করছে, রোহিঙ্গারাই এসবের জন্য দায়ী।