English Version
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৭:২৮

যেভাবে গুড়িয়ে দিয়েছিল ১১০ তলা ভবন

অনলাইন ডেস্ক
যেভাবে গুড়িয়ে দিয়েছিল ১১০ তলা ভবন

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার ১৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০০১ সালের এই দিনে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র। যে হামলার জেরে এক নিমেষে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতি। গুঁড়িয়ে গেছে সবচেয়ে শক্তিধর দেশ হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার। এদিন নিউইয়র্ক, পেনসিলভানিয়া ও সামরিক সদর দফতর পেন্টাগনে সন্ত্রাসীদের যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে হামলায় নিহত হয় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। আহত হন ১০ হাজার। আজও সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় বেঁচে ফিরে আসা ভাগ্যবানদের।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সাল। কর্মচঞ্চল নিউইয়র্ক শহরে আর কয়েকটা স্বাভাবিক দিনের মতোই দিনটি শুরু হয়েছিলো। ঘড়ির কাঁটায় ৮ টা ৪৫। হঠাৎ রোদ ঝলমলে আকাশ চিড়ে একটি যাত্রীবাহী বিমান ১১০ তলা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের নর্থ টাওয়ার ভেদ করে বিস্ফোরিত হয়। এর ১৮ মিনিটের মাথায় আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান আঘাত হানে দক্ষিণ টাওয়ারে। মুহূর্তেই ধসে পড়ে সুউচ্চ ইস্পাতের ইমারত।

এর কিছুক্ষণ পরই পৌনে দশটার দিকে খবর আসে সামরিক সদর দফতর পেন্টাগনে তৃতীয় যাত্রীবাহী বিমানটি আছড়ে পড়েছে। এবং জানা যায় পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলে বিধ্বস্থ হয়েছে হাইজ্যাক হওয়া চতুর্থ বিমান। মাত্র ১৯জন সন্ত্রাসি এই ৪টি বিমান ছিনতাই করে সেগুলোকে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রে পরিণত করে এবং জন্ম দেয় ইতিহাসের ভয়াবহতম অধ্যায়ের। তবে নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া চতুর্থ বিমানটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে বিধ্বস্থ হয়। সন্ত্রাসীদের হোয়াইট হাউজ অথবা পশ্চিম উপকূলের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার উদ্দেশ্য ছিলো বলে ধারণা করা হয়।

এই ভয়াবহ সিরিজ হামলায় নিহত হন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হন ১০ হাজার। যাদের অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারান বহু দমকলকর্মী। নিহতদের মধ্যে ৭০টি দেশের প্রবাসী ছিলেন বলেও জানা যায়। হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বলেন, হয় তার পক্ষে থাকতে হবে, নাহলে বিপক্ষে। এ ঘটনার জেরেই ইরাক ও আফগানিস্তানে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারায় ৭ হাজার মার্কিন সেনা। লাখো মানুষের মৃত্যু এবং গৃহহারা হওয়ার ঘটনায় বদলে যায় বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট।

ঘটনার তিন বছর পর মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী হামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এই হামলা হলো তার আজো কোন সদুত্তর মেলেনি। ইরানের দাবি, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে হামলা চালানোর লক্ষ্যে গোয়েন্দা কারসাজি করে এই নাটক সাজানো হয়েছে। হামলার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালের দোসরা মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে গোপন অভিযান চালিয়ে হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল।

১৬টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও ম্লান হয়নি স্বজন হারানোর স্মৃতি। হতাহতের পরিবারের প্রতি সংহতি জানাতে তাই এবারও মার্কিনীরা নিউইয়র্কের গ্রাউন্ড জিরোতে সমবেত হবেন। নীল বাতি জ্বালিয়ে স্মরণ করবেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের।