English Version
আপডেট : ২৬ আগস্ট, ২০১৭ ১৩:৫২

ধর্মগুরুর ভক্তদের তাণ্ডব, নিহতের সংখ্যা ৩২

অনলাইন ডেস্ক
ধর্মগুরুর ভক্তদের তাণ্ডব, নিহতের সংখ্যা  ৩২

ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক সহিংসতা শুরু করেছে স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা। ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকেই এ সহিংসতা শুরু হয়। রায় বেরতেই মারমুখী হয়ে ওঠে গুরমিতের অনুগামীরা। ব্যারিকেড ভেঙে পাথর ছুঁড়তে থাকে তারা। বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যানও ভাঙচুর করে। তাদের সামলাতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ, কাঁদানে গ্যাসও ছোঁড়ে। জল কামান ব্যবহার করে, লাঠি চালিয়েও পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে।

সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি বাগে আনা যায়নি। লঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও পাঁচকুলা পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে নি। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৩২ জনের জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

আনন্দবাজার জানায়, ২০০ জনের অধিক আহত হয়েছে। শহরে রক্তের অভাব দেখা দিয়েছে। হামলাকারীরা সরকারি দফতর, থানা এমনকি হাসপাতালেও হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে।

এছাড়াও পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দু’টি রেস্টেশনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ধর্মগুরু রাম রহিমের ক্ষুব্ধ অনুসারীরা। দু’টি থানাতেও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সংবাদ মাধ্যমও।

চন্ডিগড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে কয়েকটি স্থানে এবং পঞ্জাবজুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে। রাম রহিম সিংয়ের লাখো সমর্থককে চন্ডিগড়ে ঢুকতে দেওয়ার জন্য হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমারিন্দর সিং। চন্ডিগড় দুই রাজ্যেরই রাজধানী।

আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পঞ্জাবে।

ধর্মগুরুর মামলার রায় শুনতে আগে থেকেই শহরটিতে রাম রহিমের দুই লাখের বেশি ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। উত্তেজনার মধ্যেই সিরসায় নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে ১০০ গাড়ির বহর নিয়ে রওনা হয়ে আড়াইশ কিলোমিটার দূরে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছান রঙদার চরিত্র রাম রহিম সিং।

আদালত দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই ৫০ বছর বয়সী রাম রহিমকে কড়া পাহারার মধ্যে আম্বালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বহু সমর্থক। টেলিভিশন ফুটেজে ওই সময়ই রাম রহিমের অনুসারীদেরকে সহিংসতায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে।

বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা।

হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন।কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।

২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান।