English Version
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৭ ১০:৪০

যে কারণে ভারত-চীন সীমান্তে কখনও গোলাগুলি হয় না

অনলাইন ডেস্ক
যে কারণে ভারত-চীন সীমান্তে কখনও গোলাগুলি হয় না

ডোকলাম নিয়ে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-চীন সম্পর্ক। দু’মাসেরও বেশি হয়ে ধরে যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে দু'টি দেশ।

এত উত্তেজনা সত্ত্বেও দু’দেশেই সংযম বজায় রেখেছে, কোনো সহিংস ঘটনার খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যদিও পাক-ভারত সীমান্তে নিয়মিত গুলি বিনিময় হয় দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে, মাঝে মাঝেই দু’দেশের সেনা সদস্যদের মৃত্যুও হয়। কিন্তু ভারত-চীন সীমান্তে বড়জোর দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয়- তার বেশি কিছু নয়। দু’দেশের সঙ্গে দুই সীমান্তে কেন দুই চিত্র?

চীনে কর্মরত ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক শৈবাল দাসগুপ্ত বলেন, ভারত আর চীনের মধ্যে একটি সমঝোতা আছে যে, যতই মতভেদ হোক, সীমান্তে উত্তেজনা কোনো দেশই বাড়তে দেবে না। অটল বিহারি বাজপেয়ি যখন চীনে এসেছিলেন, সেই সময়েই রাজনৈতিক প্রেক্ষিতটা তৈরি হয়। পরে মনমোহন সিংয়ের আমলেও সেই একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুটো দেশের মধ্যে এরকম সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, ফ্রন্ট লাইনে যেসব সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবেন, তাদের কাছে কোনো রকম অস্ত্র থাকবে না। যদি কোনো কর্মকর্তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিয়ম হয়, তাহলে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখা থাকবে। সেজন্যই দু’দেশের সেনা সদস্যদের হাতাহাতি বা কুস্তি করার ভিডিও দেখা যায়, কোথাও গুলি বিনিময়ের ছবি দেখা যায় না।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনো চুক্তি নেই। ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতির যেসব ভিডিও দেখা যায় গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে, সেগুলো যদি কেউ খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলেই বোঝা যাবে সৈনিকরা যেন বাচ্চাদের মতো কুস্তি লড়ছেন। একে অপরকে ধাক্কা দেন, কেউ পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। চড় মারা অপমান করার শামিল। তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করেন না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনাসদস্যরা এটা করে থাকেন।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা জানান, ১৯৭৫ সালে শেষবার ভারত আর চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি চলেছিল। সেই ঘটনায় কোনো পক্ষেরই কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু সেটার পুনরাবৃত্তি হয়নি। নিয়মিত সমঝোতা আর আলোচনার মাধ্যমেই লাইন অফ অ্যাকচ্যুয়াল কন্ট্রোলের সমস্যাগুলোকে দু’দেশই ব্যাক বার্নারে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৯৩ সালে নরসিমা রাও যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে মেইন্টেন্যান্স অব পিস অ্যান্ড ট্র্যাংকুয়েলিটি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৬ সালে আস্থাবর্ধক ব্যবস্থাপত্রে সই করে দু’দেশ। ২০০৩ আর ২০০৫ সালেও চুক্তি হয়েছে। আর ২০১৩ সালে সই হওয়া বর্ডার ডিফেন্স কো-অপারেশন এগ্রিমেন্টই এ বিষয়ে সর্বশেষ চুক্তি। খবর বিবিসি।