English Version
আপডেট : ৪ মার্চ, ২০১৭ ১১:২৬

ট্রাম্পের বার্তা নিয়ে রবিবার ঢাকা আসছেন উইলিয়াম টড

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্পের বার্তা নিয়ে রবিবার ঢাকা আসছেন উইলিয়াম টড

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বার্তা নিয়ে একদিনের ঢাকা সফরে আসছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ভারপ্রাপ্ত) উইলিয়াম টড।

আগামীকাল রবিবার সকালে ঢাকায় এসে রাতেই তিনি চলে যাবেন। নতুন মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার এটিই প্রথম ঢাকা সফর।

সফরকালে উইলিয়াম টড প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মে. জে (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রাইভেট সেক্টর উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)সহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে উইলিয়াম টড ট্রাম্প শাসনামলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ব্যাপারে একটি বার্তা দেবেন বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উইলিয়াম টডের ঢাকা সফরকালে মার্কিন নতুন প্রশাসন এবং দ্বিপাক্ষিক নতুন ক্ষেত্র নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা এবং চলমান সহযোগিতা যেমন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টডের সফরে আলোচনায় থাকবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্টর উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিশেষ করে, সেদেশে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বা জিএসপি সুবিধার দাবি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বেক্সিমকো ফার্মার ওষুধ রফতানি শুরু হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সেদেশে ওষুধ রফতানি হয়নি। তবে আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা থাকলেও শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২০১৩ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর (ইউএসটিআর) সেই সুবিধা স্থগিত করে দেয়। সুবিধাটি পুনর্বহাল করতে গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা-ওয়াশিংটন দর কষাকষি চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি বিশেষত তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে বিশ্বে নানা প্রশ্ন ওঠে। পরে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র একটি অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করে। ১৬ দফা ওই প্ল্যান অব অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এখনো কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও যোগাযোগ রেখে যাচ্ছেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা সেভাবে এগুচ্ছে না।

বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির তেমন পরিবর্তন না হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের মতিগতি বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন ঢাকার কূটনীতিকরা। তবে উইলিয়াম টডের ঢাকা সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য কিছুটা পরিষ্কার হবে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের বার্তা ও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম টডের আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন মর্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেন। যদিও এ ব্যাপারে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বৈঠকে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব নিয়েও আলোচনা হয়।

এ সময় বার্নিকাট বলেন, সাব সাহারান এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো জিএসপি সুবিধা পায়। কারণ তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করতে পারে।

তিনি বলেন, এমনো হতে পারে, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়, দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশ এ সুবিধা পেতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে বার্নিকাট সাংবাদিকদের জানান, উইলিয়াম টডের সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত ক্ষমতা পরিবর্তনের কারণে রাষ্ট্রের অবস্থান বা নীতির পরিবর্তন হয় না। যারা আগে আমাদের বন্ধু ছিল, তারা এখনো বন্ধু। আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়নি, আর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ও অপরিবর্তিত আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সুবিধা জিএসপি ফেরত পাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি মার্কিন কংগ্রেসের বিষয়। আমি সব সময়ই বলি, বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে। কিন্তু এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যান পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি।