ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগ করেছেন। রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিতর্কে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই শুরু হওয়া ওই বিতর্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ব্যাপক উদ্বিগ্ন ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে মাইকেল ফ্লিন নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ফ্লিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অবরোধ নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই আলোচনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিভ্রান্তিকর 'তথ্য দেওয়ার'ও অভিযোগ রয়েছে ফ্লিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করা হয়।
অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাইকেল ফ্লিন ভোটের প্রচারের দিনগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। কখনো কখনো ট্রাম্পের প্রচার সমাবেশে সূচনা বক্তব্য নিয়েও আসতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এই প্রধানকে।
ওবামা প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে রুশ রাষ্ট্রদূতকে এক ফোনালাপে মাইকেল ফ্লিন ঠিক কি বলেছিলেন সে বিষয় তদন্ত শুরু করেছে তদন্তকারীরা। ওই ফোনালাপের ব্যাপারে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফ্লিন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন কিনা সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য রুশ রাষ্ট্রদূতকে আশ্বাস দিয়েছেন মাইকেল ফ্লিন এমন অভিযোগ এনে তদন্ত দাবি করেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা।
ট্রাম্পের সহযোগীরা বলেন, শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে করে ফ্লোরিডার পাম বিচে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে মাইকেল ফ্লিনের যোগাযোগের ব্যাপারে সম্প্রতি যে প্রশ্ন উঠেছে- সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে মাইকেল ফ্লিনও ছিলেন। ট্রাম্প মূলত ফ্লিনের ফোনালাপের বিষয়ে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মাইকেল ফ্লিনের অন্তত একটি ফোনালাপের প্রমাণ মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সির সাবেক প্রধান মাইকেল ফ্লিন নির্বাচনী প্রচারণার সময় নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। যখন অন্য জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের প্রার্থিতার সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন তখন তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী ফ্লিন। দুঃসময়ে পাশে থাকার পাশাপাশি ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি ইস্যুতেও তাঁকে বেশ সাহায্য করেছেন ফ্লিন।
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, মুসলিমবিদ্বেষসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ফ্লিন বিতর্কিতও। বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে দেখা গেছে তাঁকে। ২০১৬ সালে 'দ্য ফিল্ড অব ফাইট : হাউ উই ক্যান উইন দ্য গ্লোবাল ওয়্যার এগেইন্সট র্যাডিকেল ইসলাম অ্যান্ড ইটস অ্যালিজ' নামের বইটি লেখেন ফ্লিন। তাঁর সহলেখক ছিলেন রিগ্যান প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল লিডিন। বইয়ে ফ্লিন বলেছিলেন, 'তথাকথিত রাজনৈতিক শুদ্ধতার পূজারি' নন তিনি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটিতে নিয়মিত হাজির হওয়ার কারণেও ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে ফ্লিনের বিরুদ্ধে। একবার চ্যানেলটির এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুই সিট পরই বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। পরে অবশ্য ফ্লিন বলেছিলেন, তিনি সিএনএন কিংবা অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোর থেকে আরটিকে আলাদা করে দেখেন না। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুসলিমবিদ্বেষী টুইট করেন ফ্লিন। সেখানে তিনি লেখেন, 'মুসলিমদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়াটা যৌক্তিক'। ওই অবস্থান থেকে কখনও সরে আসার ঘোষণাও দেননি ট্রাম্পের এ উপদেষ্টা।