English Version
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০১:১৯

জাতীয় পতাকা শুধুই কাপড়ের টুকরো!

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় পতাকা শুধুই কাপড়ের টুকরো!

ভারতই শুধুমাত্র কড়া পদক্ষেপ করল! বাকি দেশগুলোর কি এ নিয়ে কোনও আপত্তিই নেই? একটা দেশের সংস্কৃতি, তার ইতিহাস, এত মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে জাতীয় পতাকা নিয়ে। তার মতো পাপোশ বানিয়ে বিক্রি হবে? যাতে পা মাড়াবে লোকজন?

ঘটনা এক- অনলাইন রিটেল সংস্থা অ্যামাজনের কানাডিয়ান ওয়েবসাইটে দেখা গেল ভারতের জাতীয় পতাকার মতো ডোরম্যাট, মানে পাপোশ বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপারটা সামনে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের টুইট, ক্ষমা চাইতে হবে অ্যামাজনকে এবং অপমানজনক প্রডাক্টগুলি শিগগিরই তুলে নিতে হবে। অ্যামাজন জানাল, পাপোশ তুলে নেওয়া হয়েছে ওই ওয়েবসাইট থেকে।  

কাঠগড়ায় আবার অ্যামাজন। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মুখ আঁকা চপ্পল অনলাইনে বিক্রি করছিল তারা। আবার তোপের মুখে অ্যামাজন। অ্যামাজনের কর্মীদের ভিসা বাতিল করে দেবেন বললেন সুষমা স্বরাজ। প্রডাক্ট তুলে নিল অ্যামাজন।

মার্কিন এবং ব্রিটিশ পতাকার মতো পাপোশ কিন্তু এখনও দিব্যি বিক্রি হচ্ছে অ্যামাজনে। এখান থেকেই একটা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, তাহলে কি ভারতই শুধুমাত্র কড়া পদক্ষেপ করল! বাকি দেশগুলোর কি এ নিয়ে কোনও আপত্তিই নেই? একটা দেশের সংস্কৃতি, তার ইতিহাস, এত মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে জাতীয় পতাকা নিয়ে। তার মতো পাপোশ বানিয়ে বিক্রি হবে? যাতে পা মাড়াবে লোকজন?

আমেরিকানরা তো তাদের জাতীয় পতাকার মতো বিকিনি পর্যন্ত তৈরি করে পরেন, তাদের এ সব নিয়ে মাথা ঘামানোর কী দরকার! এমন মন্তব্যও উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

পাল্টা জবাব আসছে, আমেরিকা অন্তত ইউরোপের চেয়ে অনেক বেশি লিবারাল। ফ্যাশন ডিজাইনাররা তো চে গেভারার মুখ আঁকা বিকিনি বানিয়েছেন। জুতো বানিয়েছেন। কই তখন তো কিছু হয় না! এ রকম নানা মন্তব্যে ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো অনেক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ভরে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, গেভারার মেয়ে কিন্তু বাবার মুখ বিকিনিতে থাকায় তীব্র আপত্তি করেছিলেন। তার জন্য অবশ্য কেউ  ক্ষমা-টমা চাননি তাঁর কাছে। 

অ্যামাজনের মালিক আবার ওয়াশিংটন পোস্টেরও মালিক। সেই সংবাদপত্রে ব্যঙ্গ করা হয়েছে, ‘ওঁর (সুষমার) টুইট-ঝড় ব্যাপারটাকে ডিপ্লোম্যাটিক কোন্দলের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছিল’! বুঝুন তবে, দেশের সম্ভ্রম, সম্মান, লড়াই করে পাওয়া স্বাধীনতার জন্য সরব হওয়াটা নাকি ‘কোন্দল’! 

দেশবাসী অবশ্য সুষমাকে দু’হাত তুলে ধন্য ধন্য করেছেন। বিতর্কের আরও একটা অভিমুখ তৈরি হয়েছে সবটা মিলে। যেখানে মন্তব্য করা হচ্ছে, আমরা ভারতীয়রা সামান্য এআইবি রোস্ট সামলাতে পারি না। জাতীয় পতাকার ডোরম্যাট তো কোন ছাড়! যে দেশে সহজেই ন্যাশনালিস্ট কিংবা অ্যান্টি-ন্যাশনাল হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়, সে দেশে ‘বাপু’র মুখ আঁকা চপ্পল পরার ঝুঁকি কেউ নেয়! এর পাল্টা বলা হচ্ছে, যে জিনিসগুলো অনুপ্রেরণা দেয়, সেগুলোর অন্তর্বাস কিংবা চপ্পলে বানিয়ে পরাটা বোধহয় উচিত নয়!  

অ্যানথ্রোপলজিস্টরা বলছেন, পতাকা একটা শক্তিশালী প্রতীক। বাস্তবের চেয়েও যেগুলো বাস্তবতর। আবেগটাও বেশি। কেউ কেউ বলছেন, দেশের পতাকা নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা নাকি ট্যাবু! যেমন রাজা বা প্রেসিডেন্টকে অসম্মান করাটা কোনও দেশে ট্যাবু। কোনও দেশে ধর্মকে অসম্মান করাটা ট্যাবু। যদি তুমি বল, তোমার দেশে বাক্‌স্বাধীনতা আছে, তবে পতাকাকে একটা কাপড়ের টুকরো ভাবতে ক্ষতি কি? এবেলা।