সার্ক সম্মেলন অনিশ্চিত

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নভেম্বরের ৯-১০ তারিখে দেশটিতে ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনে এবারকার সম্মেলন ভেস্তে যেতে বসেছে।
১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩১ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বার এক হতে পেরেছেন এ সংস্থার প্রধানরা। একজন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত না থাকলে ভেস্তে যায় সম্মেলন। বেশিরভাগ সময় ভারত ও পকিস্তানের মধ্যে ঝগড়ার রেশ ধরে শীর্ষ সম্মেলন পিছিয়ে পড়েছে।
এ সম্পর্কে ভারতের একটি বাংলা গণমাধ্যম বলছে, ভারত-পাকিস্তান চলতি ছায়াযুদ্ধের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সার্ক শীর্ষ বৈঠক। নভেম্বরে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় এই শীর্ষ বৈঠকে ভারত আদৌ যোগ দেয় কিনা, তার উপরই নির্ভর করছে সব কিছু।
দিল্লি ও ইসলামাবাদের ছায়াযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু অবশ্যই সেই কাশ্মীর। চার সপ্তাহ হয়ে গেল লাগাতার কার্ফু, প্রাণহানি ও সংঘর্ষ চলছে উপত্যকায়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারতবিরোধী প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে বেলুচিস্তানের প্রসঙ্গ তোলায় দ্বৈরথ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
পাকিস্তান বুধবার দাবি করেছিল, বিদেশসচিব পর্যায়ে কাশ্মীর নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক দিল্লি। পাক বিদেশসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরির এই দাবির বৃহস্পতিবার কড়া জবাব দিয়েছেন ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, ইসলামাবাদে গিয়ে আলোচনায় বসতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সে আলোচনা হবে সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে। এটাই এখন জ্বলন্ত সমস্যা। তবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। কারণ, এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোনো অধিকারও নেই ।
নভেম্বরে শীর্ষ বৈঠকের আগে অক্টোবরে সার্ক দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন হওয়ার কথা।
বুধবার নয়াদিল্লি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে এই সম্মেলনে পাঠানো হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের আশঙ্কা— ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত সার্ক শীর্ষ বৈঠকই না ভন্ডুল হয়ে যায়। কেন না সার্ক-এর নিয়ম অনুসারে গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর যে কোনো একজন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত না-হলেই শীর্ষ বৈঠক বাতিল হয়ে যায়।
এর আগে কার্গিল যুদ্ধ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অরাজকতার জেরে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল সার্ক শীর্ষ বৈঠক।
এই মুহূর্তে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, শেষ পর্যন্ত এবারের সার্ক শীর্ষ বৈঠকে ভারত যাক বা না-যাক, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ঠেলায় নভেম্বরের ওই সম্মেলন এখনই কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে। অথচ দু’বছর আগে ক্ষমতায় আসার পরেই প্রতিবেশী নীতিকে তাঁর কূটনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বার বার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রথম গন্তব্য হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন নেপালকেই। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্র নেতাদের। প্রত্যেকটি সার্ক-রাষ্ট্রে মোদী নিজে সফর করেছেন। এর আগে কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ বৈঠকে মোদী তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা করেছিলেন— দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে গোটা অঞ্চলের সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ জন্য আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য করিডর, সার্ক মেডিক্যাল ভিসা, টিবি এবং এডস-এর জন্য সার্ক রিজিওনাল ল্যাবরেটরি তৈরি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু ভারত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সার্ক সংক্রান্ত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের আশু সম্ভাবনা নেই। এ কথা বুঝতে পারছে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো।
নেপালের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী রমেশনাথ পাণ্ডের বক্তব্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি না-হওয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোট দেশগুলো পড়ে পড়ে মার খাবে।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের স্বার্থেই ছোট দেশগুলোর উচিত ভারত ও পাকিস্তানকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করা। তার পরামর্শ, সার্কের বর্তমান সদর দফতর কাঠমান্ডুতে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটা সেতু বানাতে তাই নেপালই এগিয়ে আসুক।
ভারতের প্রাক্তন বিদেশসচিব ললিত মান সিংহের কথায়, সার্ক-এর চার্টারেই রয়েছে যে এখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় তোলা যাবে না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জেরে বার বার প্রভাবিত হচ্ছে সার্ক। তাঁর কথায়, কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না, কারণ সেভাবে অগ্রগতিই হয়নি কোনো বিষয়ে!