English Version
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:৩৫

বাঙ্গালী ভিক্ষুকের মেয়ে এখন জার্মানির এমপি

অনলাইন ডেস্ক
বাঙ্গালী ভিক্ষুকের মেয়ে এখন জার্মানির এমপি

 

বাবা মায়ের মুখে শুনেছেন পুর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশে। বাবা হরিনাথ ফকির ছিলেন স্থানীয় একটি মন্দিরের পূজারী। তার কোন সম্পত্তি, বিত্ত-বৈভব কিছুই ছিল না। প্রতিদিন মন্দিরের আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে চাল তুলতেন মন্দিরের জন্য। সেই চালের একটি অংশ মন্দিরে দিতেন আর একটি অংশ তিনি রাখতেন নিজের পরিবারের জন্য। মাঝেমধ্যে ছোট্ট মেয়েটিও বাবার সাথে যেত গ্রামে গ্রামে চাল তুলতে। এভাবেই চলত তাদের সংসার। সেদিনকার সেই ভিক্ষুকের ছোট্ট মেয়েটি আজ কাঁপাচ্ছে সমগ্র ভারতবর্ষ এমনকি জার্মানি পার্লামেন্ট পর্যন্ত। কারন হরিনাথ ফকিরের মেয়ে নন্দিনী এখন জার্মানির এমপি।

বাঙ্গালী মেয়ে নন্দিনীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে। রায়গঞ্জ হাসপাতালের ঠিক একটু পিছনে নন্দিনীদের বাড়ি। এই রায়গঞ্জ এবং দুর্গাপুরে নন্দিনীর বেড়ে ওঠা। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবার সাথে চাল তুলতে যাওয়া।  নন্দিনীর বয়স যখন ছয় বছর তখন তিনি ভর্তি হন দুর্গাপুর স্কুলে এখান থেকে ভালো ফলাফল করে নন্দিনী ভর্তি হন রায়গঞ্জ কলেজে।

নন্দিনীর বয়স যখন আঠারো বছর তখন হরিনাথ ফকির ইহলোক ত্যাগ করেন। নন্দিনীর আর কোন ভাই বোন ছিলেন না।নন্দিনী তার মাকে নিয়ে খুব বেকায়দায় পড়েন কিন্তু হাল ছাড়েনি ব্যাপক প্রতিকুলতার মাঝে নন্দিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য ভর্তি হন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নন্দিনী একটি ছোট্ট পত্রিকায় মডারেটর হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি নেন। এবং বেশ সফলতার সহিত তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে আবারো দু:স্বপ্ন নেমে আসে তার জীবনে। একমাত্র অবলম্বন তার মা পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন। অসহায় নন্দিনী দিশেহারা হয়ে পড়েন। আপন বলতে এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই তার। আবারো ঘুরে দাঁড়ান নন্দিনী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুণ রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দেন। তার সামনে এগিয়ে যাবার নতুন একটি দ্বার উন্মোচিত হয়।

ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ভাষা ও সংস্কৃতিতে উচ্চতর গবেষণার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান সুদূর জার্মানিতে। ভর্তি হন জার্মানির সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ফান্ড বৃদ্ধির আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নন্দিনী। সবার দৃষ্টি পড়ে নন্দিনীর উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নন্দিনী জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক দল ‘সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জার্মানি’র সাথে।দলের নন্দিনীর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। একসময় পার্টিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক(এশীয় অঞ্চল) হিসেবে নন্দিনী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

সেই সাথে পার্টির মুখপত্রের মুল সম্পাদনার দায়িত্বে তাকে নিয়োজিত করা হয়। গতবছরের নভেম্বরে সারলান্ডের আনাট্রপলি অঞ্চলের উপনির্বাচনে নন্দিনী তার পার্টি থেকে নমিনেশন পান এবং সিডিএফের প্রার্থী জন্টস কে তিন শত দুই ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করেন।

কলকাতা থেকে যাবার পর নন্দিনীর প্রায় দশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তিনি দেশে এসেছেন মাত্র দুইবার। নন্দিনী এখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জার্মানিতে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য। নন্দিনী জানিয়েছেন বাইরে থেকে যারা জার্মানিতে পড়াশোনা করতে আসেন তাদের জন্য লেভেল-২ পর্যন্ত জার্মান ভাষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই নিয়ম ভারতীয়দের জন্য অনেক কঠিন তাই তিনি জার্মান শিক্ষামন্ত্রণায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের জন্য চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। নন্দিনী ইতোমধ্যে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন সারলান্ড অঞ্চলের স্বনামধন্য ব্যাবসায়ী বেঞ্জামিন কে। তাদের ঘরে এসেছে দুটি সন্তান।