English Version
আপডেট : ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ১২:১৬

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ সৌদি প্রিন্স বিন সালমান!

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ সৌদি প্রিন্স বিন সালমান!
ফাইল ছবি

বয়স যখন মাত্র ১২ বছর তখন থেকেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বৈঠকে বসতেন মোহাম্মদ বিন সালমান। বাবা সালমান রিয়াদের গভর্নর থাকায় সেই সুযোগ মেলে তার। ১৭ বছর পর মোহাম্মদ বিন সালমান আজ বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। দায়িত্ব পেয়েই অবশ্য নিজের দেশকে এক নৃশংস যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছেন। ইয়েমেনের সাথে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই আরেক আঞ্চলিক পরাশক্তি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে সৌদি আরব। আর এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে আপাত দৃষ্টিতে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধারী নেতা হয়ে ‍উঠেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

ছোট বেলা থেকেই পিতৃভক্ত মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশ আর পারিবারিক সম্পদ রক্ষার যোগ্য উত্তরসূরী ভাবা হয় তাকে। অন্য ভাইয়েরা যখন উচ্চ শিক্ষা জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে গেছে, তখন সালমান থেকে গেছেন দেশেই। পড়াশোনার জন্য বেছে নিয়েছেন রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখান থেকেই আইনে স্নাতক শেষ করেন তিনি। সালমান একজন আন্তরিক যুবক হিসেবেই পরিচিত। কখনোই ধুমপান ও নেশা করেন না। পার্টির প্রতিও তার কোনো আগ্রহ নেই।

২০১১ সালে সালমানের বাবা ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হন। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এরপর ২০১২ সালে হন প্রিন্স। এর প্রতিটি ধাপেই বাবার সাথে এবং পাশে ছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ। সৌদি পরিবারের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত যুবক। সৌদি ধর্মীয় ও অভিজাতরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রিন্স মোহাম্মদের বাবা তাকেই উত্তরসূরী হিসেবে দেখতে চান।

কিন্তু সমালোচকদের দাবি, ভাগ্যক্রমে প্রিন্স মোহাম্মদ এটা পেয়েছে। কিন্তু তিনি কখনোই অর্থের পেছনে ছোটেননি। তার আসল লক্ষ্য ক্ষমতা। ২০১৫ সালে তার বাবা যখন রাজসিংহাসনে বসেন, তখন থেকেই তাকে একছত্র ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়। কারণ তার বাবার বয়স ৭৯ বছর এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তাই বাবার ক্ষমতা ও সিংহাসন রক্ষার একমাত্র রক্ষক হয়ে যান প্রিন্স মোহাম্মদ।

বাদশাহ সালমানের কয়েক মাসের শাসনামলে ক্ষমতার মাত্রা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে জাতীয় জ্বালানি কোম্পানি,  অর্থনীতি কাউন্সিল ও বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এটা করা হয় তাকে সিংহাসন দখলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফের চেয়ে উপর রাখতে।

আমলারা দীর্ঘদিন নিজ নিজ পদে থাকায় ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। আর দুর্নীতি বন্ধের ডাক দিয়ে নিজের পারফর্মেন্স দেখানো সুযোগ নেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। হঠাৎ করে কাক ডাকা ভোরে বিভিন্ন  সরকারি অফিসে গিয়ে ফাইল দেখতে শুরু করেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অপ্রত্যাশিত কাজ দেখে ঘুমন্ত রিয়াদ যেনো জেগে উঠে। অল্প সময়ে বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান সালমান।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘যুবকদের মধ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয়। কঠোর পরিশ্রম করেন। অর্থনৈতিক সংস্কারের ভাবনা আছে তার। এছাড়া যুব সম্প্রদায়কে বোঝাও চেষ্টা করছেন তিনি।’

সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংই তরুণ। তাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে। কিন্তু বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। আনুমানিক ২০-২৫ শতাংশই বেকার।

কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে প্রতিবেশিদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে একটি নোংরা যুদ্ধেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। গত বছরের মার্চে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাউতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী। কয়েক দশক ধরে সৌদির সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ইয়েমেনে অশান্তির আগুন বাড়ছে।

ব্যাপক বিমান হামলার পরও ইয়েমেন পরিস্থিতির কি অবস্থা তা ঠাহর করা যাচ্ছে না। যুদ্ধের প্রায় এক বছর হতে চললেও প্রাণহানি ছাড়া কিছুই অর্জিত হয়নি। প্রাণহানির পাশাপাশি প্রচুর স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। আর হাউতিরা রাজধানী সানার এবং উত্তরাঞ্চলের অনেক অংশ এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তার পরও যুদ্ধ চলছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ জেসন টুভাই বলেন, ‘তিনি খুবই মেধাবী। অর্থনীতির জন্য তিনি অনেক ভালো কাজ করছেন। অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন এনেছেন; যা ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’

তবে অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে সালমান কিছু জটিল কাজের অবতারণা করছেন বলেও মনে করেন জেসন। বিশেষ করে ইয়েমেন যু্দ্ধ ও ইরানের সঙ্গে সংঘাত তাকে দিন দিন বিপজ্জনক করে ‍তুলছে।

আঞ্চলিক অধিপাত্যের জন্য ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে তার ভালো কাজ অনেকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের জন্য যখন ৩৪টি মুসলিম দেশকে নিয়ে যে জোট গঠন করেন তার লক্ষ্য যে ইরান সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সিরিয়ার বাসার আল-আসাদ সরকার এবং লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাকে সবদিক দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে ইরান। গত পাঁচ বছর তাদের সমর্থনেই টিকে রয়েছেন আসাদ। কিন্তু যেকোনো শান্তি আলোচনার আগে আসাদের পরাজয় চায় সৌদি আরব।

সম্প্রতি শিয়া নেতা নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ‘ইটের বদলে পাটকেল’ সংঘাত আরো বেগবান হয়েছে। এর জের ধরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রিয়াদ থেকে ইরানি রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার করে এবং ইরানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব।

সৌদির পক্ষ নিয়ে তেহরান থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল(জিসিসি)’র ভুক্ত দেশগুলো। পরে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইরানি দূতাবাসে বোমা হামলার অভিযোগ উঠে সৌদির বিরুদ্ধে। এই ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যে চিন্তা আরো বাড়াচ্ছে।

গত গ্রীষ্মে একটি বহুল প্রচারিত চিঠিতে ক্ষমতাসীন পরিবারের মধ্যে তরুণ প্রিন্সের ‘দাম্ভিকতা’ নিন্দিত হয়। এমনকি তার বাবা সহ তাকে রাজপরিবার থেকে বিতাড়িত করার কথাও উঠে। কিন্তু তারপরও সৌদিতে এই তরুণ প্রিন্সের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইরানের সঙ্গে সংঘাত তাকে কতদূর নিয়ে যাবে?

সূত্র : দ্যা ইন্ডিপেনডেন্ট।