English Version
আপডেট : ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৭:০৭

জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ:উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মা-বাবা-সন্তান

অনলাইন ডেস্ক
জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ:উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মা-বাবা-সন্তান

গ্রামের সরু পথ ধরে তিনটি সাইকেলে কলেজে যাচ্ছেন তিন সহপাঠী। বাবা-মা আর ছেলে। এই অনন্য ছবিটির সঙ্গে এখন পরিচিত ভারতের নদীয়া জেলার হাঁসখালির মামজোয়ান গ্রাম।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দরিদ্র মানুষের জীবনে যা ঘটে তাই ঘটেছিল বলরাম মন্ডল এবং কল্যাণীর জীবনে। দুবেলা আহার যোগাতে শিক্ষাজীবনের ইতি টেনেছিলেন প্রাইমারির ছাত্র বলরাম মণ্ডল। আর নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বলরামের বউ হয়ে আসেন কল্যাণী দেবী। যথারীতি তারও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মাধ্যমিক পাশ আর করা হয়নি। তবু জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ থেকে লেখাপড়ার ইচ্ছেটা মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন দুজনেই।

সেই অনুরাগ থেকে চল্লিশোর্ধ বয়সে মণ্ডল দম্পতি বছর দুয়েক আগে প্রাইভেটে মাধ্যমিক পাশ করেন । শুরু হয় নতুন ইতিহাস। চলতি বছর ছেলে বিপ্লবের সঙ্গে বাবা-মা দুজনই ভর্তি হয়ে যান। একসঙ্গে এখন তারা তিনে মিলে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী।

নদীয়ার ধানতলার আড়ংঘাটা হাজরাপুর হাইস্কুলে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণীতে এখন তারা সহপাঠি।  বিষয় বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, শিক্ষাবিজ্ঞান এবং ইতিহাস। বাড়ি থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বলরাম মন্ডলের ভাষ্যমতে, আগের চেয়ে আর্থিক অবস্থা কিছুটা ফিরেছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত আবারও লেখাপড়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেন তারা। চাষের কাজ মিটিয়ে স্কুলের পথ ধরেন বলরাম। কল্যাণীদেবীও সংসারের সব কাজ সামলে, রান্নাবান্না শেষ করে তারপর পা রাখেন সাইকেলের প্যাডেলে। এতে যথেষ্ট পরিশ্রম হলেও বেশ আনন্দে আছেন তিনি।  বলেন, সংসারে তিনটি মাত্র মানুষ। তিন জনেই স্কুলে থাকি। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে তবে খাওয়া। তবু কী যে তৃপ্তি বলে বোঝাতে পারব না!

লেখাপড়ার প্রতি নিজের অদম্য ইচ্ছা সম্পর্কে বলরাম মন্ডল বলেন, আর্থিক সংকটে যথা সময়ে পড়া আর হয়ে ওঠেনি। কষ্টটা ঘুন পোকার মতো তাড়িয়ে বেড়াতো। স্ত্রী কল্যাণীও বলেন, পড়ার ইচ্ছেটা রয়ে গিয়েছিল তারও। এবার তাই একসঙ্গে আবারও নতুন করে শুরু করেছেন।

কলেজের শিক্ষকরা এমনকি তাদের পড়শিরাও এ ব্যাপারে বেশ সহযোগীতার মনোভাব পোষণ করেন।বলরাম বলেন, স্যারেরা সব সময় উৎসাহ দেন। অসুবিধা হচ্ছে কিনা, খোঁজ নেন। তাদের মুখ চেয়ে ভাল করে পাশ করতেই হবে। রাতে সপরিবারে পড়তে বসেন তারা।

পড়া বুঝতে অসুবিধে হলে সহায় ছেলে বিপ্লব। বিপ্লবের তিন  গৃহশিক্ষকও মা-বাবাকে সাহায্য করেন। স্কুলে এসে বয়সের ব্যবধান ভুলে যান মণ্ডল-দম্পতি। সহপাঠী সুপ্রিয়া বিশ্বাসের কথায়, ওরা নিজেদের মতো লেখাপড়া করেন। আমাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেন। পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে জিজ্ঞাসা করেন। কোনও বাধা নেই।

এবার জানা দরকার বাবা-মার সঙ্গে স্কুলে যেতে কেমন লাগে ছেলের? বিপ্লব জানাচ্ছে, একই ক্লাসে পড়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনও বিষয় আলোচনা করে পড়লে সহজে পড়া বোঝা যায়।

প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার হোতা বলেন, ‘ওই দম্পতি ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন। কিন্তু, ওঁদের পড়ার আগ্রহ দেখে ভর্তি করে নিয়েছি। এখন দেখছি সেদিনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না।

স্কুলের শিক্ষকেরা জানালেন, ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতিযোগিতাও রয়েছে বেশ। ছেলের তুলনায় পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরে ছেলেকে পিছনে ফেলতে চান বলরাম মন্ডল।