English Version
আপডেট : ৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৭:০৪

ধর্ষিত হওয়ার পর সরাসরি ইনস্টাগ্রামে তরুণী

অনলাইন ডেস্ক
ধর্ষিত হওয়ার পর সরাসরি ইনস্টাগ্রামে  তরুণী

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের ‘লাইভ-ব্লগে’ নিজের ধর্ষণের কথা বলেছেন এক তরুণী। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা ওই তরুণী সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হোস্টেলের বাথরুমে ধর্ষণের শিকার হন। আর ধর্ষিত হওয়ার পর পরই নিজের ইনস্টাগ্রামে লাইভ ব্লগিংয়ে এই ‘ভয়াবহ সময়ের’ ভেতর দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি।

লাইভ ব্লগিংয়ে ওই তরুণী জানান, এই অবস্থার মধ্যেও তিনি সবার সামনে এসেছেন যাতে এই ধরনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বর্ণনার সাহস সব নারীরই হয়।  

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট ‘ধর্ষিতা’ ওই তরুণীর পরিচয় প্রকাশ করেছে। সংবাদমাধ্যমটির খবর অনুযায়ী ২৭ বছরের ওই তরুণীর নাম অ্যাম্বার আমর। অ্যাম্বার নিজেও একজন মানবাধিকারকর্মী। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে গেছেন ‘ধর্ষণ বন্ধ করো, শিক্ষিত হও’ শীর্ষক একটি প্রচারণার কাজে। গত সপ্তাহে অ্যাম্বার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি আপলোড করেন। যাতে দেখা যায়, একটি বাথরুমের মেঝেতে বসে কাঁদছেন অ্যাম্বার।

আর ওই ছবির নিচেই ‘ধর্ষণের’ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এই মানবাধিকারকর্মী। অ্যাম্বার জানান, দুই দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। এরপর হোস্টেলের এক ব্যক্তি তাঁকে গোসল করাতে বাথরুমে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে তাঁকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন ওই পুরুষ।

এরপর অ্যম্বার তাঁকে থামতে বললেও থামেননি ওই ব্যক্তি। বরং আরো উগ্র হয়ে উঠে জোর করে তাঁকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে শারীরিক দুর্বলতার জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন অ্যাম্বার। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সম্বিত ফিরে পেয়ে আবিষ্কার করেন ওই ব্যক্তি তাঁর সাথে সম্ভোগে লিপ্ত। অ্যাম্বারের বর্ণনায় ধর্ষণের ওই চিত্রটি উঠে এসেছে এভাবেই।

ধর্ষণের পর ওই ব্যক্তি যখন দেখেন জ্ঞান ফিরে এসেছে অ্যাম্বারের, তখন তিনি ‘যত্ন করে’ তাঁকে গোসল করিয়ে দেন। যাতে গোসলের সাথে সাথে শরীরে থাকা ধর্ষণের আলামতও মুছে যায়।

‘ধর্ষণ বন্ধ করো, শিক্ষিত হও’ প্রচারণার কাজে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসা অ্যাম্বার বলেন, যখন আমাকে ধর্ষণের পর লোকটি চলে গেল তখন আমার মনে লজ্জা, ঘৃণা ও ব্যথা ছাড়া আর কোনো অনুভূতিই কাজ করেনি। আমার কাছে ধর্ষণের অভিজ্ঞতা এই প্রথম, আর আমি খুবই অসহায় হয়ে আবিষ্কার করলাম এই ভয়াবহ অনুভূতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর একজন ধর্ষিতা কী অনুভব করে।

ইনডিপেনডেন্টকে অ্যাম্বার জানান, এর পরই আমি ভাবলাম আমার বসে থাকলে চলবে না। এই ঘটনা জানাতে হবে মানুষকে। আমার জন্য নয়, সেই সব নারীর জন্য যারা বছরের পর বছর এই নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও মুখ খুলতে সাহস পায় না।

ধর্ষণের পর ঘটনাস্থল থেকে ছবি প্রকাশের পর ইনস্টাগ্রামে আরও দুটি ছবি প্রকাশ করেন অ্যাম্বার। যার একটিতে তিনি একটি ‘ধর্ষণ পরীক্ষা যন্ত্রের’ উপর শুয়ে আছেন।

ইনস্টাগ্রামে লেখা অ্যাম্বার তাঁর বার্তাটি শেষ করেন এভাবে, ‘আমি জানি অনেকেই এখন আমাকে অভিযুক্ত করবেন, কেন আমি ওই ব্যক্তিকে আমাকে গোসল করাতে নিয়ে যেতে দিলাম। কিন্তু আমি অসুস্থাবস্থায় আমাকে গোসল করিয়ে আনতে বলেছি, আমি তাঁকে ধর্ষণের আমন্ত্রণ জানাইনি।’

অ্যাম্বার লিখেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার নয় যে আমি তাকে চুমু খেয়েছি কি না, সে মাতাল ছিল কি না এবং এটাও কোনো ব্যাপার নয় আমি অসুস্থ অবস্থায় গোসল করতে তাঁর সাহায্য নিয়েছি। কিন্তু আমি তাঁকে আমার প্রতি হিংস্র আচরণ করতে বলিনি, আমাকে রক্তাক্ত করার অধিকার তাঁকে দেইনি। আমি তাঁকে বলিনি আস, আমাকে ধর্ষণ করো।’

নিজের লেখার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশেরও সমালোচনা করেন অ্যাম্বার। তিনি লিখেন, ‘আমার ওপর এই নির্যাতনের ঘটনা শুনে পুলিশ এমন আচরণ করছিল যেন এই ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। বাড়ি গিয়ে দুটো ওষুধ খেয়ে নিলেই তো হয়!’