English Version
আপডেট : ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৫৮

তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে শিয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে শিয়ারা

সৌদি আরবে শিয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় আজ রোববার ভোরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছে। ইরানের বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে ওই দূতাবাস ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। 

 অন্যদিকে বিবিসি বলছে, সৌদি শিয়া নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে ইরানে শিয়া মতাবলম্বীরা তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাস ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।এর আগে তারা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে।পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। দেড়ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনী।

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে শেখ নিমর আল-নিমরকে শনিবার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও, নিমর-এর সমর্থকেরা মনে করেন, সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার কারণে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়।

নিমর আল-নিমর-এর মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। এছাড়া এই ঘটনার কঠোর প্রতিশোধ নেবার কথা ঘোষণা করেছে ইরানের দ্য রেভোলিউশনারি গার্ড। সৌদি আরবের শিয়া অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চল কাতিফ প্রদেশেও প্রতিবাদ হয়েছে।  এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ঘটনা সম্পর্কে রয়টার্স আরো জানায়, মুখোশধারী বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসের ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তারা দূতাবাসে হামলা চালায় এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। টুইটারে প্রকাশিত ছবিতে দূতাবাসের কোনো কোনো অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দেখা যায় ভাঙচুর করা আসবাবও।

সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনার পরপরই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকতে বলেছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক স্থাপনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেও বলেছে। তেহরানে দূতাবাসে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে সৌদি আরব।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন জাবের আনসারি বলেছেন, সৌদি সরকার বরাবরই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন এবং উগ্রপন্থীদের মদদ দিয়ে আসছে, আর নিজের দেশের সমালোচকদের নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দামিয়ে রাখছে। শিয়া নেতা নিমরকে দুই বছর আগে বিক্ষোভ করার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। ২০১১ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করে, তাতে নিমর প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। সৌদি আরবে শিয়ারা দীর্ঘদিন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ করে আসছে।

গত অক্টোবরে নিমরের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ও শিয়া মুসলিমপ্রধান দেশ ইরান নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সৌদি আরবকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। নিমরের এক ভাই গতকাল বলেন, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সৌদি রাজত্বে বিদেশিদের ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটাতে চাওয়া; শাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’ শুরু হলে সৌদির তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষোভ শুরু করে। নিমরের সমর্থকেরা বলেছেন, নিমর শুধু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমর্থন করেছিলেন এবং সরকারবিরোধী সব ধরনের সহিংস বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।সৌদি আরব বরাবরই শিয়াদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং এই বিক্ষোভের পেছনে ইরানের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছে।