সামুদ্রিক মাছের তেল ওমেগা- ৩ আমাদের ‘মস্তিস্কের খাদ্য’

সামুদ্রিক মাছ অনেকেরই প্রিয় খাবার। পুষ্টিগুণ বিচারে সামুদ্রিক মাছ কোন অংশেই কম নয়। মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। সামুদ্রিক মাছের আমিষ সহজে পরিপাক হয়। সামুদ্রিক মাছের তেল ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এর একটি উৎস, যা ‘মস্তিস্কের খাদ্য’ নামে পরিচিত। সামুদ্রিক মাছে আছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এছাড়াও মাছে চর্বি, খনিজ তেল, আয়রণ, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়। মাছের শতকরা ২৩ ভাগই আমিষ। মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। মাছ মানুষের হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককে কার্যকর ও সুরক্ষিত রাখতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৫৪৯,০০০ নারীর উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, যেসব নারী প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার মাছ খান তাদের তুলনায় মাছ না খাওয়া নারীরা ৫০ শতাংশ বেশি হার্ট এটাকের ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি পরিমাণ মাছ খেলে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুঝুকি ৩৬ শতাংশ কমে। নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেলে বেশ কিছু সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। যেমন-
১. রোগ প্রতিরোধ মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে নানা রোগ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম সামুদ্রিক এসব মাছ। এতে জিংক ও আয়োডিন আছে। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আয়োডিন গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধ করে।
২. সহজে হজমযোগ্য আমিষ সামুদ্রিক মাছের আমিষ সহজে পরিপাকযোগ্য। এ ছাড়া দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন বি-এর উৎকৃষ্ট উৎস।
৩. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এ ছাড়া এসব মাছে প্রচুর সিলেনিয়াম রয়েছে, যা দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্যামন, ম্যাকরেল মাছ থেকে ভিটামিন-এ ও ডি পাওয়া যায়।
৪. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। সামুদ্রিক মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল LDL ও VLDL কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল HDL বাড়িয়ে দেয়, ফলে হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারেনা এবং রক্তনালী পরিষ্কার, সুপরিসর থাকায় রক্ত চলাচল বাধাহীন থাকে। মাছ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা হ্রাস করে। ফলে সামুদ্রিক মাছ হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৫. কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ এ ধরনের মাছ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সামুদ্রিক মাছের আমিষ ও তেল দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৬. ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখতে পারেন। এতে তাদের এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে।
৭. গর্ভবতী নারী ও শিশু যেসব নারী তাদের গর্ভকালীন সপ্তাহে অন্তত ৩৪০ গ্রাম সামুদ্রিক খাবার খান তাদের সন্তান বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। সামুদ্রিক মাছের নানাবিধ পুষ্টিগুণের কারণেই এমনটা হয়।
৮. মস্তিস্কের বিকাশ এটি বাচ্চাদের মস্তিষ্কের গঠন উন্নত করে ও স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া, মাছের তেলে থাকা ডকসা হেক্সোনিক অ্যাসিড এবং এলকোসা পেন্টাএনোইক অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়।
সামুদ্রিক মাছ মানুষকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ রাখে। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন নিয়ম করে মাছ খাওয়া উচিত।