English Version
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:০৪

কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শিশু পানি সংকটে

অনলাইন ডেস্ক
কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শিশু পানি সংকটে

নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। কবে নাগাদ রোহিঙ্গা আসা বন্ধ হবে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। এসব সংকট ছাড়াও রয়েছে বাসস্থানের সমস্যা। কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির থেকে বালুখালী ঢাল পাহাড় পর্যন্ত ছোট বড় ১৭টি পাহাড়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া পালংখালী, থ্যাংখালী ও টেকনাফের উনছিপ্রাংয়ের

বিভিন্ন পাহাড়েও আশ্রয় নিয়েছে তারা। তাদের সবাইকে এখনো স্যানিটেশনের আওতায় আনা যায়নি। ফলে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এসব এলাকায় ১ হাজার ৯০০ টয়লেট এবং ৩৫টির মতো নলকূপ বসানো হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পাহাড় ও টিলায় ছড়িয়ে পড়ায় তাদের সবাইকে এ ব্যবস্থার মধ্যে আনা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিতে এসেছেন ডা. ইকবাল মাহমুদ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখা না গেলে নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন। এর মধ্যে চর্মরোগ অন্যতম। এ ছাড়াও জন্ডিস, জ্বর, কাশি ও নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা রোদ, বৃষ্টির মধ্যে থাকছে। নতুন পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাচ্ছে, যা তাদের শরীরে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছে।’ বালুখালী, কুতুপালং ও উনছিপ্রাং এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের মতো ঘর বানিয়ে থাকছে। যে জায়গায় খাচ্ছে, থাকছে তার আশপাশেই মলমূত্র ত্যাগ করছে। চারদিকে মশা, মাছি উড়ছে। অনেকে আবার পলিথিনের বেড়া দিয়ে টয়লেট তৈরি করেছে খোলা জায়গায়। এদিকে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা একই পোশাকে আট-দশ দিন থাকছেন। গায়েই তাদের কাপড় ভিজছে, আবার শুকাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

হাজেরা খাতুন নামে এক নারী বলেন, ‘মংডুর ম্যারুল্লার শিকদার পাড়া থেকে আমরা আসছি। আমার সাত ছেলে ও তিন মেয়ে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কোনো কাপড় নিতে পারিনি। দৌড়ে পালিয়ে আসছি।’ রোহিঙ্গা নারীরা সবাই বোরকা পড়ে থাকেন। স্যাঁতসেঁতে রাস্তা ও পাহাড়ে তারা সারা দিন বোরকা পরেই থাকেন। বৃষ্টির পানি, কাদামাটিতে বোরকা ভিজে একাকার। কিন্তু তারপরও তাদের খাবারের জন্য রাস্তার ধারেই বসে থাকতে হচ্ছে। হাবিবা নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা হয় গতকাল বিকেলে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোথাও ঘর বানাতে পারিনি, রাস্তায় থাকছি। টাকাও নাই।’ জ্বরে আক্রান্ত এই নারী বলেন, ‘দুপুরে মেডিক্যাল ক্যাম্প থেকে ওষুধ নিয়েছি, তারপরও জ্বর বাড়ছেই। মংডু থেকে যে কাপড় পরে বের হয়েছিলাম, সেই একই কাপড়ে এখনো।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম লুৎফর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত জায়গায় আনার চেষ্টা করছি। এত বড় সংখ্যা যে তাদের ম্যানেজ করে একই জায়গায় আনা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তার পরও আমরা তাদের একই জায়গায় নেব। তা না হলে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না।’

রাখাইন রাজ্যে আগুন জ্বলছেই : রাখাইনের রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এখনো আগুন জ্বলছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর এখনো পোড়ানো হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মংডুর রোহিঙ্গা দং এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গারা তা দেখে বিলাপ করছেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে ইরান : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিমানে ৪০ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে ইরান। এর মধ্যে রয়েছে বিছানা, তাঁবু, কম্বল, বিস্কুট, শুকনো খাবার ও ওষুধ। ইরানের ডেপুটি মিনিস্টার ইব্রাহিম রহিমপুর ও সংসদ সদস্য চেরারাণী এসব ত্রাণ নিয়ে আসেন। শুক্রবার বিকেলে এই ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল।

ইরানের ডেপুটি মিনিস্টার ইব্রাহিম রহিমপুর বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজ বিশ্বের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হতে চলছে। ত্রাণ পৌঁছে দিয়ে এই বার্তাই দিতে চাই। ইরান যেকোনো নির্যাতিত জাতির সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ইরানের পক্ষ থেকে আপাতত ৪০ টন ত্রাণ পাঠানো হলো। পর্যায়ক্রমে আরো ত্রাণ আসবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস দিহনেভি, ইরান দূতাবাসের গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগ কর্মকর্তা খন্দকার মো. মাহফুজুল হকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এই ত্রাণসামগ্রী আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হবে।