ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজে কুসংস্কার

বিয়ের পর নতুন বউকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকেন, কোনো নতুন খবর আছে নাকি? এতে কোনো লজ্জাবোধ না থাকলেও ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই।
তাছাড়া ঋতুস্রাব নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার। গ্রামের অশিক্ষিত পরিবারের পাশাপাশি শহরের শিক্ষিত পরিবারে এ নিয়ে বেশকিছু কুসংস্কার রয়েছে।
বিশেষ করে হিন্দু পরিবারে এসব কুসংস্কার বেশি। চুল ধোয়া- ঋতুস্রাব হলে বলা হয়, মেয়েদের দু’দিন চুল ধোয়া উচিত নয়। এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং চিকিৎসকরা বলে থাকেন মাথায় পানি দিলে ঋতুস্রাবের ব্যথা অনেকটা কমে এবং এতে আরাম পাওয়া যায়।
অভিশপ্ত- ঋতুস্রাবের দিনগুলো মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, যেন তারা অভিশপ্ত৷ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ে এমন চিত্র বেশি হয়ে থাকে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এমনকি গাছে পানিও দিতে দেয়া হয় না। সমাজে প্রচলিত ধারণা, তাদের দেয়া পানিতে গাছ নাকি মরে যাবে। যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। মসলাযুক্ত খাবার- মাসিকের সময় হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে। মসলাযুক্ত খাবার তাই না খাওয়া ভালো৷ কিন্তু অনেক বাড়িতে আচার ছুঁতে দেয়া হয় না মেয়েদের। এতে নাকি আচারও নষ্ট হয়ে যাবে৷ এমনকি আচার খেতেও দেয়া হয় না তাদের৷ যৌন সম্পর্ক নয়- মাসিক চলাকালীন মেয়েদের শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে৷ অনেকের খুব ব্যথা হয়৷ তাই এ সময়ে মেয়েদের বিশ্রাম করা দরকার৷ মনে করা হয়, এ সময় যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়াই ভালো৷ স্বামীর উচিত স্ত্রীকে এ সময় বিশ্রাম দেয়া ও যত্ন নেয়া, যাতে তার কাজের চাপ বেশি না হয়৷ রান্নাঘরে ঢুকতে মানা- অনেক হিন্দু পরিবারে মেয়েদের ঋতুস্রাব চলাকালীন রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না৷ বিশেষ করে বড় পরিবারে এ ধরনের কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়। তারা মনে করে, এতে খাবার দূষিত হয়৷ এই ধারণা একেবারেই ভুল৷
বিছানায় শুতে না দেয়া- অনেক পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের বিছানায় শুতে দেয়া হয় না৷ মাটিতে শুতে বলা হয়৷ কোনো কোনো পরিবারে তো ঘরে নয়, বরং বাইরে,অর্থাৎ বারান্দায় শুতে দেয়া হয় তাদের৷ অথচ এতে যে ওই মেয়েটির কষ্ট আরো বেড়ে যায়, তা কেউই লক্ষ্য করে না৷ নাপাক রক্ত- অনেকেই বলে থাকেন, মাসিকের রক্ত নাপাক, মানে অপবিত্র৷ তাদের ধারণা এই রক্ত দিয়ে জাদু, ঝাড়ফুকও করা যায়৷ আশ্চর্যের বিষয়, শুধুমাত্র অশিক্ষিত পরিবারে নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এ ধারণা প্রচলিত আছে৷