English Version
আপডেট : ২৫ মে, ২০১৬ ১৩:০৬

বিচ্ছেদের কারণে কেন আত্মহত্যার প্রবণতা?

BBC
বিচ্ছেদের কারণে কেন আত্মহত্যার প্রবণতা?
সম্পর্ক বা বিচ্ছেদের কারণে প্রায়ই আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে কোথাও একটি শূন্যতা কাজ করে, বলছেন মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম

আত্মহত্যা যারা করে, তাদের মধ্যে নিজেদের প্রতি ভালোবাসাটা নেই। তাই সহজেই তারা নিজেদের শেষ করে দিতে পারেন। তবে পারিবারিক বন্ধন জোরালো হলে তাদের এই প্রবণতা থাকে না বলে বলছেন মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম।

বাংলাদেশে ফেসবুকে আত্মহত্যার হুমকি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক মডেলের গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, সাবিরা হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে তারা প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই সন্দেহ করছে। ফেসবুকে আত্মহত্যার হুমকি দেয়া সর্বশেষ নোটে তিনি তাঁর যে বন্ধুকে দায়ী করে গেছেন, সেই বন্ধুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব হবে বলে পুলিশ বলছে। তবে ফেসবুকে দেয়া তার সর্বশেষ পোষ্ট ছিলো একটি ভিডিও যাতে সাবিরা হোসেনকে ছুরি হাতে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে দেখা যায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তার বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বিচ্ছেদের কারণে প্রায়ই তরুণ তরুণীদের আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখা যায়। কেন এই প্রবণতা? মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলছেন, ''কেন সেটা এটা করেছে, সেটা আর জানার সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অনেকে আত্মহত্যার আগে মানুষকে জানানোর একটি ইচ্ছা হয়। অনেকে হয়তো টেক্সট করে যে তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। অনেক সময় এসব বার্তা পেয়ে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।'' কিন্তু সাবিরা হোসেন ভিডিও বার্তাটি ফেসবুকে আপলোড করার পরেও একজন বন্ধু ছাড়া আর কেউ সাবেরার খবর নিতে যায়নি। এতে অবাক হয়েছেন মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানমও। তিনি বলছেন, ''তার ফেসবুকের সঙ্গে যারা ছিল, তারা তো এটা দেখার কথা ছিল। তাহলে তারা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলো না কেন?'' আত্মহত্যা থেকে বিরত রাখার কোন উপায় আছে কিনা, জানতে চাইলে মেহতাব খানম বলেন, ''একজন যখন বেড়ে ওঠে, ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, সে সময় যদি তার পারিবারিক বন্ধনটি যদি ভালো না থাকে, তাহলে তীব্র একটা নিরাপত্তাহীনতার তৈরি হয়। একটি জাহাজ যদি ঝড়ের সময় নোঙর ফেলে না রাখে, তাহলে তো সে ভেসে যাবে।'' তাই পারিবারিক বন্ধনটি এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলছেন, ''আত্মহত্যা যারা করে, তাদের বড় হওয়াটা যদি দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে তাদের মধ্যে আসলে আত্ম ভালোবাসা ব্যাপারটা নেই। কোথাও একটা শূন্যতা কাজ করে। নিজেকে সে গ্রহণ করতে পারেনা, ভালোবাসতে পারে না।'' তিনি বলছেন, ''নিজের প্রতি ভালোবাসাটা সবার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। নিজেকে ভালোবাসলেই আরেকজনকে ভালোবাসা দেয়া সম্ভব।'' প্রেম বা অন্য কোন ঘটনায় আঘাত পেলে একজন হয়তো অন্যকোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারে। কিন্তু এ ধরণের ব্যক্তিদের মধ্যে কি সে ব্যাপারটি কাজ করে না? মেহতাব খানম বলছেন, ''যখন মানুষ আত্মহত্যার চিন্তা করে, তখন অনেকটা হঠাৎ করেই নিজেকে শেষ করে ফেলে। অনেকের এ ধরণের চিন্তা আগে থেকে আসে। তারা বিষয়টি অন্যদের সাথে শেয়ার করার পর অনেক সময় কাটিয়ে ওঠে। কিন্তু অনেকে সেই কাটিয়ে ওঠাটা হয়তো শেষপর্যন্ত পারে না।''