English Version
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:০৪

গর্ভকালীন ডায়েটিং কি অনাগত সন্তানের জন্য ভাল?

অনলাইন ডেস্ক
গর্ভকালীন ডায়েটিং কি অনাগত সন্তানের জন্য ভাল?

 

বডির শেপ ঠিক রাখার জন্য তো ডায়েটিং করে চলছেন; এমনকি গর্ভাবস্থাতেও। এযুগের অনেক স্বাস্থ্যসচেতন আধুনিক নারীরা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামে অভ্যস্ত থাকেন। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের এ বিষয় দুটো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

নিউ জার্সির ফ্যাশন স্টাইলিস্ট ও ওয়ারড্রোব কনসালটেন্ট মারুকা। গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধির কারণে গেস্টাশনাল ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে তিনিও দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তা ছাড়া পেশাগত কারণে তিনি দেহের সৌন্দর্যহানি ঘটাতে ইচ্ছুক নন। ২০০৩ সালের জুনে সন্তান আসে তার। গর্ভকালীন সময়ে তিনি তার ২০ পাউন্ড ওজন বাড়ে। তবে চিকিৎসকরা জানান, প্রয়োজনের চেয়ে ৫ পাউন্ড ওজন কম ছিল তার।

তিনি সব জাঙ্ক ফুড বাদ দেন। সবজি আর উচ্চ প্রোটিনের খাবার খেতেন। মর্নিং সিকনেস এবং দুর্বলতা থেকে বাঁচতে ঘড়ি ধরে প্রতি ৩ ঘণ্টা অন্তর খেতেন তিনি। সপ্তাহে একবার পিৎজার একটি টুকরা খেতেন। বিশেষ উপলক্ষে সামান্য কেক খেতেন। সপ্তাহে ছয় দিন তিনি আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করতেন। প্রতিরাত ৯টার সময় বেশ কয়েক ধরনের ব্যায়াম করে গেছেন। টানা ৬০ মিনিট ধরে হাঁটতেন প্রতিদন। তার গর্ভাবস্থা স্বাস্থ্যকর ছিল। এভাবে ৪০তম সপ্তাহে কাছাকাছি চলে এলেন। তখনই চিন্তিত হয়ে উঠলেন চিকিৎসক। এত কিছুর পরও গর্ভের বাচ্চার ওজন মাত্র ৪ পাউন্ড হয়েছে। তাই শিশুর আরো কিছু ওজন বাড়াতে তিনি ব্যায়াম চালিয়ে গেলেন।

সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) থেকে জানানো হয়, ৪৭ শতাংশ গর্ভবতী নারীর ওজন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। কিন্তু নারীরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা সেলিব্রেটিদের মতো ফিগার ফিরে পেতে চান জন্মদানের পর।  এ কারণে গর্ভাবস্থাতেও খাদ্যতালিকা বা ব্যায়াম ধরে রাখেন।

২০১২ সালের এক জরিপে বলা হয়, ৪৮ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় ওজন কমাতে খাদ্যতালিকা বাছাই করেন। ব্যায়ামও করতে থাকেন। ২০১৫ সালের অবটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ শতাংশ গর্ভবতী নারী প্রয়োজন মতো ওজন বৃদ্ধিতে সম্মত হতে চান না। তারা আগে সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান। যদিও অধিকাংশ নারী ওজন বৃদ্ধি না করার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তারপরও কিছু নিয়ন্ত্রণ ঠিকই ধরে রাখেন।

নারীদের এই প্রবণতা গর্ভাবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। ওজন বৃদ্ধি শঙ্কা মনের মধ্যে কাজ করতে থাকলে তা শিশুর বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় নারীরা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যানেমিয়ার অভাবে ভোগেন। ফলে তারা বেশিরভাগ সময় অবসাদগ্রস্ত হয়ে থাকেন। দুর্বলতা দেখা দেয়। যদি মা এ সময় বেশি বেশি না খান এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন, তবে শিশু ইনট্রাইউটেরিন গ্রোথ রেস্ট্রিকশন (আইইউজিআর) সমস্যায় পড়ে। এটা এমন এক অবস্থা যখন শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না।

আইইউজিআর মূলত মা-শিশুর সংযোগকারী নাড়িতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও এ অবস্থা ডেলিভারির সময়েও সমস্যা সৃষ্টি করে। এমনকি মস্তিষ্কের সুষ্ঠু গঠনে বাধাপ্রদানসহ বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মতো ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।

অবশেষে মারুকা ফুটফুটে ছেলের জন্ম দেন। তার বাচ্চার ওজন হয় ৫ পাউন্ড ৭ আউন্স। আড়াই সপ্তাহ পরই তিনি ব্যায়ামাগারে আসেন ব্যায়াম করতে। তার শিশু শেষ পর্যন্ত আন্ডার ওয়েট থেকে যায়।তাই খাবার নিয়ন্ত্রণ না করে বেশি বেশি খাওয়া উচিত। খুব বেশি ব্যায়াম না করে হাঁটার মতো হালকা ব্যায়াম করা উচিত। ওজন যথেষ্ট পরিমাণ না বাড়লে আপনার শিশুরই ক্ষতি।

এক ব্রিটিশ গবেষণায় বলা হয়, যে গর্ভবতী নারীরা যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করেন না তাদের শিশুর পরবর্তী জীবনে স্থুলতার ঝুঁকি দেখা দেয়।ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে জানানো হয়, কম ওজনের শিশুরা নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। খুব দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়া বা মস্তিষ্কের বিকাশে ধীরগতি ইত্যাদি ঘটে থাকে।