English Version
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৬:৫৩

সিএইচসিপিদের কর্মবিরতি; হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত

উজ্জ্বল রায়,নড়াইল প্রতিনিধি
সিএইচসিপিদের কর্মবিরতি; হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত

 

চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মচারী সমিতি গতকাল রোববার থেকে নড়াইলে তিন দিনব্যাপী আধাবেলা (সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) কর্মবিরতি শুরু করেছে।  এতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গতকাল সরেজমিন জেলার ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে,কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে অনেক রোগীর ভিড়। এর মধ্যে শিশুরোগীর সংখ্যাই বেশি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে বসে থাকলেও তাঁরা আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না। অনেক অভিভাবক অসুস্থ্য শিশুদের চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে,তাঁরা শুধু স্বাস্থ্যসেবা বন্ধই করেননি। জানুয়ারি মাস থেকে অনলাইন প্রতিবেদন দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। জানতে চাইলে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সমিতির নড়াইল জেলা সভাপতি ও সদর উপজেলা গুয়োখোলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) সাগর সেন বলেন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর আমাদের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দেয়।

২০১৩ সালে আমাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের (রাজস্ব খাতে) নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ শাহ নেওয়াজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি (স্মারক নম্বর স্কাঃঅধিঃ/প্রশা-৩/বিবিধ-৩/২০০৮/৪৬৬৮/১(০৩)) নড়াইল সিভিল সার্জন বরাবরে পাঠান। দুই বছর অতিবাহিত হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সে জন্য দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করছি। তিনি বলেন,নড়াইল জেরায় মোট ৯৪ জন কর্মরত আছি। এর মধ্যে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও রয়েছে। আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি বুধবারের মধ্যে (১৭ ফেব্র“য়ারি) সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসলে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্র“য়ারি) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের হাতিয়ারা গ্রামের নির্মল বিশ্বাসের স্ত্রী স্বপ্না বিশ্বাস বলেন,“আমার দুই বছরের ছলডার (শিশুটি) ঠান্ডা লাগে সর্দি-কাশি হইছে। গুয়োখোলা হাসপাতালে (কমিউনিটি ক্লিনিক) ছলডারে নিয়ে গিলি ডাক্তার কলো রুগী দেখতি পারবো না অসুধও দিতি পারবো না। আমাগে হরতাল চলতিছে। কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের খড়ড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে,চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য ১৬জন ( ৬ জন পুরুষ,৫ জন মহিলা ও শিশু) রোগী ক্লিনিকের সামনে বসে আছেন। ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি রবিউল ইসলাম বলেন,কেন্দ্রের নির্দেশনায় আমরা আধাবেলা কর্মবিরতি পালন করছি। লোহাগড়া উপজেলার চাচই-ধানাইড় কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ইকবাল হোসেন বলেন,স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী যদি মানসিকভাবে নিজেই বিপর্যস্ত থাকে তাহলে সে কিভাবে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেবে। নড়াইল সিভিল সার্জন তারেক মোঃ শফি জানান,জেলায় মোট ৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদে জনবল কর্মরত আছেন। সরকার পর্যায়ক্রমে তাদের চাকুরি রাজস্বখাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ জনপদের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা না দিয়ে আন্দোলনে যাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।