English Version
আপডেট : ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৩:১৩
চোখের যত্ন

কম্পিউটারে কাজের সময় চোখকে বিশ্রাম দেয়ার নিয়ম (প্রশ্নোত্তর)

অনলাইন ডেস্ক
কম্পিউটারে কাজের সময় চোখকে বিশ্রাম দেয়ার নিয়ম (প্রশ্নোত্তর)

আজকের ডিজিটাল যুগে সবকিছুই কম্পিউটারাইজড্। কম্পিউটার ছাড়া কিছু ভাবা যায়না। শ্রেণীকক্ষে, অফিসে কাগজের স্থান দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। এতে বিড়ম্বনাও কিন্তু কম নেই। পিঠ-ঘাড়ের ব্যাথাসহ মহামূল্যবান সম্পদ চোখের মারত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। আসুন প্রশ্নোত্তরে দেখে নেই কম্পিউটারে টানা কাজ করার সময় কিভাবে চোখ বাঁচাবেন।

প্রশ্ন: কম্পিউটারের সামনে একটানা কাজ করলে কিছুক্ষণ পরেই চোখ ব্যাথা করে,  এমনকি লাল হয়ে যায়।

উত্তর: একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে চোখের পাতা পড়ে না। চোখের জল শুকিয়ে যায়। বার বার চোখের পাতা ফেললে এই সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন: কাজের সময় ব্যাস্ততায় সে কথা মনে থাকবে নাকি?

উত্তর: তাহলে সমস্যা হবেই। একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের পেশী ক্লান্ত হয়ে যেমন পায়ে ব্যথা হয়, এটাও তেমনই। চোখের পাতা না পড়লে চোখের পেশিও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কাজের ফাঁকে আধ ঘণ্টা অন্তর কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে চোখকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দিতে হবে। চোখে পানির ঝাপটা দিলে আরও ভাল।

প্রশ্ন: চোখে পানি দিলে জ্বালা অনুভূত হয়।

উত্তর: চোখ বন্ধ করে পানি দিতে হবে। অথবা টিয়ার সাবসিটিউট ড্রপ দিলেও কাজ হবে। মোট কথা চোখকে আর্দ্র রাখতে হবে।

প্রশ্ন: সেই সাথে মাথা-ব্যথা করলে?

উত্তর: চোখের পাওয়ার বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়। বেশ কিছু দিন এমনটা হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

প্রশ্ন: কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের পাওয়ার বাড়ে?

উত্তর : হ্যাঁ। বিশেষ করে ছোটদের। একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ কাছের জিনিস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধে হয়। একে ‘মায়োপিয়া’ বলে। অর্থাৎ চোখের মাইনাস পাওয়ারটা বেড়ে যায়।

প্রশ্ন: কিন্তু এ যুগে তো কম্পিউটার ছাড়া চলবে না।

উত্তর: নিয়মিত কম্পিউটারে কাজ করলে ছয় মাস অন্তর চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। ছোটদের অবশ্যই করতে হবে। কম্পিউটার এমন ভাবে রাখতে হবে, যাতে চোখে খুব বেশি চাপ না পড়ে।

প্রশ্ন: সেটা কী রকম?

উত্তর: আমরা যখন ঘুমাই চোখের পাতা ও মণি দুটোই থাকে নীচের দিকে। মানে ওটাই চোখের বিশ্রাম অবস্থা। তাই কাজ করার সময় চোখকে সেই রকম রাখতে পারলে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে। এ জন্য কম্পিউটারের স্ক্রিন সব সময় আই লেভেলের নীচে রাখা উচিৎ। যাতে চোখকে ওপরের দিকে দীর্ঘক্ষণ রাখতে না হয়। তা ছাড়া ঘাড়ের জন্যও এটা খুব জরুরী।

প্রশ্ন: ঘাড়েও সমস্যা হবে?

উত্তর: হ্যাঁ। দীর্ঘক্ষণ ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ে ব্যথা হবে। শুধু তাই নয়, শুয়ে বা ঘাড় কাত করে পড়াশুনো করলে বা টিভি দেখলেও কিন্তু চোখে চাপ পড়বে। তার থেকে সমস্যা হতে পারে।

প্রশ্ন: শুয়ে শুয়ে বই পড়তে অনেকেই পছন্দ করেন।

উত্তর: এটা উচিৎ নয়। চোখকে এমন ভাবে রাখতে হবে, যেন অহেতুক চাপ না পড়ে। চোখ থেকে দেড় ফুট বা ৩৩ সেমি দূরে রাখতে হবে বই। আর ডিফিউস আলোয় পড়তে হবে। কম আলোয় পড়লে চোখে চাপ পড়ে।

প্রশ্ন: অনেক সময় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তখন কী করণীয়?

উত্তর: চোখে জলের ঝাপটা দিতে হবে। চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু যদি এমনটা প্রায়ই হয় তবে একটা চোখ চাপা দিয়ে দেখবেন অন্য চোখ দিয়ে দেখতে অসুবিধে হচ্ছে কি না। সমস্যাটা ‘লেজি আই’ থেকে হচ্ছে কি না, বুঝে নিতে হবে।

প্রশ্ন: ‘লেজি আই’ কী?

উত্তর: একটা চোখ হয়তো খারাপ হয়েছে, সেটা দিয়ে দেখতে অসুবিধে হচ্ছে। যেহেতু দুটো চোখ দিয়ে দেখি আমরা, একটা চোখ খারাপ হলে সেটা টের পাই না। এই ভাবে অনেক দিন পর্যন্ত ধরা পড়ে না একটা চোখ খারাপ হয়ে আছে। একে বলা হয় ‘লেজি আই’। হয়তো কারও রেটিনাতে স্ট্রোক হয়েছে। কিছু বুঝতে পারেনি। বছরখানেক পর অন্য চোখে সমস্যা হওয়ায় ব্যাপারটা ধরা পড়ল। আগে টের না পাওয়ায় সেটার ট্রিটমেন্ট করা হয়নি। যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। গ্লুকোমার ক্ষেত্রেও এমনটা তো প্রায়ই দেখা যায়।

প্রশ্ন: গ্লুকোমা হলে তো মহাবিপদ?

উত্তর: প্রথম দিকে ধরা পড়লে ক্ষতি অনেকটা যায়। এমন অনেক গ্লুকোমার রোগী আসেন, যাদের একটা চোখ বেশ কয়েক বছর ধরে খারাপ। কিন্তু টের পাননি। এবার যখন আর একটা চোখও বেশ খানিকটা খারাপ হতে শুরু করেছে, তখন টনক নড়ছে। তখন দেখা গেল অন্য চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। হয়তো আগে ধরা পড়লে ক্ষতি অনেকখানি আটকানো যেত।

প্রশ্ন: চোখ ভাল রাখতে কী কী করা উচিৎ?

উত্তর: জন্মের পর থেকেই চোখের যত্ন নিতে হবে। নবজাতকের অন্যান্য চেক-আপ’এর পাশাপাশি চোখের চেকআপও করতে হবে। কারণ চোখের নানা সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে বাচ্চা। তাই চেক-আপ করলে বেরিয়ে আসবে। ৪-৫ বছরে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় বাচ্চাকে চোখ দেখাতে হবে। পাওয়ারের কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা সেটা ধরা পড়বে।

প্রশ্ন: কম্পিউটারে কাজ করার সময় অ্যান্টিগ্লেয়ার চশমা কতটুকু কাজ দেয়?

উত্তর: না। এ সব কোনও কাজের নয়। বরং চোখে পাওয়ারের সমস্যা না থাকলেও ধুলোবালির মধ্যে কাজ করতে হলে জিরো পাওয়ারের চশমা পরে নেবেন।

প্রশ্ন: ধুলোবালি চোখের কি ক্ষতি করে?

উত্তর: ধুলো ঢুকলে চোখ ব্যাথা করে। তখন অনেকে চোখ ডলে দেয়। তাতে কর্নিয়ার ক্ষতি হয়ে যায়। দূষণ থেকে ত্বকের ক্ষতি হয়। চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। তাই বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে অবশ্যই চোখে পানির ঝাপটা দেবেন।

প্রশ্ন: আর খাওয়া-দাওয়া?

উত্তর: ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন থেকে চোখের ক্ষতি হয়। সুতরাং জাঙ্কফুড যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। ভিটামিন এ, ই ও সি সমৃদ্ধ সবুজ শাকসব্জি ও ফল চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। 

আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে


পরামর্শ দিয়েছেন

ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য।