ঈদের বাংলা সিনেমা : মরাস্রোতে ভরা জোয়ার

চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে বছরে অন্তত ২০টি ব্যবসাসফল সিনেমা থাকতে হয়। আমাদের দেশে বছরে ৬০-৭০টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ ছিল সেই ছবিগুলো দর্শক টানতে পারছে না। এবারের ঈদে বাদশাহ দ্য ডন, শিকারী, সম্রাট, রানা পাগলা দ্য মেন্টাল'সহ চারটি ব্যয়বহুল ছবি মুক্তি পায়। পরিচালকেরা আশাবাদী হলেও দেশের চলচ্চিত্রটি সংশ্লিষ্টরা মুলধন তুলে আনার বিষয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এবারের ঈদে সব আশঙ্কাকে মিথ্যে করে মুক্তি পাওয়া চারটি সিনেমাই ব্যবসা সফল ছবির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ঢাকার বাইরের মৃতপ্রায় সিনেমা হলগুলোতেও এবার দর্শকের জোয়ার লক্ষ্য করা গেছে। হুট করে চলচ্চিত্র জগতে আলোকচ্ছটা দেখা যাওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতারা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন। রানা পাগলা দ্য মেন্টাল ১১৬ টি হলে মুক্তি পেয়েছে। বাদশাহ দ্য ডন মুক্তি পেয়েছে ৪৬ টি হলে। যৌথ প্রযোজনার ছবি শিকারী ৯৮ হলে মুক্তি পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সম্রাট ৭৬টি হলে মুক্তি পেয়েছে (নির্মাতা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য)। প্রাপ্ত তথ্য বর্তমানে দেশের হলসংখ্যার বিষয়ে কিছুটা হেরফের হতে পারে। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত রানা পাগলা দ্য মেন্টাল ছবিতে শাকিব খানের সাথে অভিনয় করেছেন তিশা ও পড়শী। জাজ মাল্টিমিডিয়ার 'বাদশা দ্য ডন' ছবিতে অভিনয় করেছেন জিৎ ও নুসরাত ফারিয়া। শিকারীও যৌথ প্রযোজনার ছবি। শাকিব খানের সাথে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন কলকাতার শ্রাবন্তী। শিকারীর মাধ্যমে হালের যৌথ প্রযোজনায় প্রথমবারের মতো কাজ করলেন শাকিব খান। মোস্তফা কামাল রাজের সম্রাট ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস। ১৯৯০ সালেও বাংলাদেশে প্রায় ১২শ’ সিনেমা হল ছিল। এরপর চলচ্চিত্রে ভর করে অশ্লীলতা। এক শ্রেণীর নির্মাতা অশ্লীলতাকে পুঁজি করে অসংলগ্ন কাহিনীর চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে থাকেন। কমতে থাকে দর্শক। বন্ধ হতে থাকে একের পর এক সিনেমা হল। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমা হলের সংখ্যা ৩৫০ টি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে রাজধানীর বাইরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হলগুলোতে পুরনো ছবি মুক্তি পেত। ফলে স্থানীয়রা সেসব ছবি হলে গিয়ে দেখার আগ্রহ পেতেন না। যাদের সামর্থ থাকতো তারা জেলা পর্যায়ের হলে গিয়ে নতুন ছবি দেখতে। ডিজিটাল যুগে চলচ্চিত্রের বেহাল দশার এটাও একটা কারণ। তবে এবছর নির্মাতাদের একটু কৌশলী হতে দেখা গেছে। ফলে এবারে সেই চিত্রটা পাল্টাতে শুরু করেছে। নির্মাতারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের হলগুলোতেও বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি দিয়েছেন। ফলাফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে। আমাদের স্থানীয় প্রতিবেদকদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিনেমা গুলোর খবর নিয়ে জানা গেছে ঈদের পর থেকে ঢাকার বাইরের প্রচুর হলে দর্শকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এমনকী ঈদের প্রথম তিন দিন অনেক হলে লাইন ধরেও টিকেট না পেয়ে ফিরে গেছে অনেক দর্শক। সম্রাট ছবির পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, বিগত ঈদ গুলোতে বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা হতো না এবারের ঈদে সম্ভাব্য মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এবার সব ধরনের দর্শকেরা হলে গিয়ে ছবি দেখছেন। গুলশান ট্রাজেডির পরে পরেও দর্শকেরা হলে গিয়ে টিকেট পাচ্ছেন না, এটা খুব ছোট বিষয় না। যদি এই ঘটনা না ঘটতো তাহলে কি পরিমাণ দর্শক হতে পারতো চিন্তা করেন! তিনি বলেন, সম্রাট মুক্তি পেয়েছে ৭৬টি হলে, দ্বিতীয় সপ্তাহেও বুকিং চলছে। আমি আমার ছবির বিষয়ে যে পরিমাণ প্রত্যাশা করেছিলাম, তারচেয়ে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। রানা পাগলা দ্য মেন্টাল ছবির পরিচালক শামীম আহমেদ রনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বাংলা চলচ্চিত্র এবার বেশ ভাল ব্যবসা করছে। আমাদের মতো তরুণরা যারা বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপন দেখি তাঁদের জন্য অবশ্যই এটা ইতিবাচক দিক। ঈদে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের সবক'টি হলে হাউজফুল লক্ষ্য করা গেছে। অনেক হলে দর্শকদের দ্বিতীয় দফাতেও টিকেট না পেয়ে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশাকে কিছুটা হলেও দূরে সরাতে সক্ষম হয়েছে। বাকিটা সময় বলবে। তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল নয়, চলচিত্র পরিবেশনা, হলগুলোর ব্যবস্থাপনা, সাউন্ড কোয়ালিটি এইসব বিষয়েও তদারকি দরকার। কেন না অভিযোগ রয়েছে হুমায়ূন আহমদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত 'কৃষ্ণপক্ষ' ছবির চাহিদা থাকা সত্বেও অনেক হলে মুক্তি দেওয়া হয় নি পরিবেশকের জটিলতায় আবার রিয়াজুল রিজুর 'বাপজানের বায়স্কোপ' মুক্তির পরদিন ৯০ ভাগ হল থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামিয়ে দেওয়া হয়।