গৌরব ও ঐতিহ্যের ২০ বছরে বশেমুরবিপ্রবি

ঢাকা : বশেমুরবিপ্রবি আমার পরিচয়, অস্তিত্ব, অহংকার। আমার স্বপ্ন পূরণের স্থান। শুধু আমার একার না, আমার মতো হাজারো স্টুডেন্টের স্বপ্ন পূরণের স্থায়ী ঠিকানা। আসছে ৮ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) দিবস। শুভ জন্মদিন প্রাণের ক্যাম্পাস।
এ বছর ২১তম বর্ষে পদার্পণ করছে ভালোবাসার বিদ্যাপাঠটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জ জেলার গোবরা উপজেলায়।
শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। নীতি বাক্য-জানুন, চিন্তা করুন, পরিবর্তন সাধন করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নাম হলো বশেমুরবিপ্রবি। আমার দেওয়ার মতো তেমন কোনো পরিচয় নেই কিন্তু তারপরও যখন কেউ প্রশ্ন করলে তাকে উত্তরে বলি আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তখন অনেক ভালো লাগে । অন্যদের কাছ থেকে অসম্ভব রকম সমীহ পাই । আমি তোমার পরিচয়ে পরিচিত বশেমুরবিপ্রবি। জাতির পিতার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।
২০০১ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে ২০১১ সাল থেকে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১২ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ৮ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৫ টি বিভাগের মোট ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিদ্যাপাঠটি। বর্তমানে অনেক পরিবর্তন এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস। চারদিকে গাছপালা, ভবন, খেলার মাঠ, মনোরম পরিবেশ, বিভিন্ন চত্বর, লেকপাড় সব মিলে চমৎকার লাগে প্রিয় ক্যাম্পাসটি। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। রয়েছে ৩৪ টি বিভাগ, ৭ টি অনুষদ ও ৩ টি ইন্সটিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ছাত্রদের জন্য ৩ টি হল এবং ছাত্রীদের জন্য দুটি হল যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। রয়েছে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরি ভবন, ক্যাফেটারিয়া, মন্দির, প্রধান ফটক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। কিন্তু আজ শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাস।
এডমিশন পরীক্ষা এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র আর পরীক্ষার্থীরা হলো সৈনিক। এতো যুদ্ধ করে যখন চান্স পাওয়া হয় তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা তো থাকবেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানবিকাশের জায়গা।
২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে আমারা ক্যাম্পাসে ৩ মাসেরও কম সময় অতিবাহিত করতে পেরেছি। কারণ হঠাৎ করেই শিক্ষার শুরুতে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে আর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কয়েক মাসে অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছিল, তাই স্বপ্নের এই ক্যাম্পাসের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাই অনুভব করছি ক্যাম্পাসের শূন্যতা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছুই আমাদের মুগ্ধ করে তোলে তা হলো, সবার বন্ধুসুলভ বন্ধন। সেখানে কেউ কোনো বিপদে পড়লে শিক্ষক, সিনিয়র ভাইয়া-আপু থেকে শুরু করে ক্লাসমেট, নন-ডিপার্টমেন্ট সবাই যেভাবে এগিয়ে আসে, তা সত্যিই কতটা ভালোলাগার তা বোঝাতে পারবো না। এই প্রতিষ্ঠান আমাকে দিয়েছে কিছু বন্ধুসুলভ শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে সব থমকে গেছে। করোনাকালীন সময়ের জন্য এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হয়তো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হবে না।
তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবাসন সংকট নিরসনসহ, বিভাগের সমস্যা সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা করবেন প্রশাসন এই কামনায়। আমরা চাই একটি সুস্থ, নিরাপদ ক্যাম্পাস। আমাদের গর্বের ইতিহাসগুলোকে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হতে পারব। সত্যের ন্যায়, সাফল্য ও সগৌরবে এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণের এই বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একসময় সেরা বিদ্যাপীঠ হয়ে উঠবে। ২১তম পদার্পণে এই প্রত্যাশা। শুভ জন্মদিন বশেমুরবিপ্রবি।