English Version
আপডেট : ২৪ জুন, ২০২১ ১২:২৭

অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চায় শিক্ষার্থীরা, প্রশাসনের অনীহা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চায় শিক্ষার্থীরা, প্রশাসনের অনীহা

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় এক বছরেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে কিংবা সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠে।

তবে গোপালগঞ্জের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এক সভার মাধ্যমে ঈদের পূর্বে পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব নয় বলে ঘোষণা দেয়। আর এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন অনলাইন পরীক্ষার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। এমনকি কোনো কোনো বিভাগে ৯০-৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে।

বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান রনি বলেন, ‘অন্যান্য বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে স্বশরীরে কিংবা অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার তারিখ প্রকাশ সহ পরীক্ষাও নিয়ে নিচ্ছে সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার তারিখ শুধু একের পর এক পিছাচ্ছে। এভাবে পরীক্ষার তারিখ পেছানোর কারনে আমরা এক প্রকার হতাশায় ভুগছি এখন। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ২০২২ এও আমরা অনার্স সম্পন্ন করতে পারবো না। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তাই স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে আমরা অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে সেমিস্টার শেষ করতে চাই।’

এই শিক্ষার্থী আরও জানান, তার বিভাগের পক্ষ থেকে গত ৩০ মে,২০২১ তারিখে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা, প্রক্টর এবং রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন জমা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে তারা চান প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেনো বিভাগসমূহকে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়।

এপ্লাইড কেমিস্ট্রি অন্য কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন লিমন বলেন, ‘আমাদের বিভাগের প্রায় ৯০% শিক্ষার্থী সেকেন্ড টাইমার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কোন সেশনজট না থাকায় আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সার্টিফিকেট পেয়ে যেতাম। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ২০২১ সালের মধ্যেও আমাদের অনার্স শেষ হবে কিনা বলা মুশকিল। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে আমরা ইতোমধ্যে তিন বছর পিছিয়ে পড়েছি। আর করোনার মধ্যে যেহেতু বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে সেহেতু আমরা বিসিএস পরীক্ষাও মিস করেছি। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও সরকার বয়সসীমা বৃদ্ধি করেনি। সবমিলিয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করতে করতে আমাদের প্রত্যেকের বয়স প্রায় সাতাশ আটাশ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যদি আমাদের অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে হলেও অনার্স শেষ করে দেয়া হয় তাহলে হয়তো আমরা আরো চাকরির জন্য একটা বছর বেশি সময় দিতে পারবো।’

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী তমাল রায়হান বলেন, ‘প্রথমে অনেকের মতো আমিও চাইতাম সব স্বাভাবিক হলে অফলাইনে পরীক্ষাগুলো দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ করবো। কিন্তু এখন এটুকু পরিষ্কার বুঝতে পারছি, এই মহামারী সহজে বিদায় নিচ্ছে না। বরং আরো কয়েক বছর আমাদেরকে এই ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করতে হবে। তাই অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষায় না থেকে অনলাইনে এক্সাম দিয়ে শিক্ষাজীবনটা শেষ করতে চাইছি।’

ফার্মেসী বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরমান আলী বলেন, ‘আমাদের এক বছরের মধ্যে মাস্টার্স সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে হলেও মাস্টার্স সম্পন্ন করতে চাই।’

বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো: কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইন কিংবা অফলাইনে যে পদ্ধতিতেই হোক না কেনো আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই।’

তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে থাকলেও অনলাইন পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহী নয় বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম মাহবুব বলেন, ‘অনলাইন পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন। এছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে, এসকল এলাকায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নেই, পাশাপাশি অনেকের প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও নেই। তাই অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে অনেকেই হয়তো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আর একারণেই আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বশরীরে পরীক্ষা নিতে চাচ্ছি।’

তবে উপাচার্যের এই কথার সাথে পুরোপুরি একমত নন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন ইউজিসির সফট লোনসহ সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা মূলক বিভিন্ন লোন চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সহজেই ডিভাইস সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়া যাদের বাড়িতে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা রয়েছে তারা পরীক্ষার কয়েক দিন নিকটবর্তী শহরে অবস্থান করতে পারে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বশেমুরবিপ্রবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনলাইনে মিডটার্ম পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয় তবে পরবর্তীতে ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়।