English Version
আপডেট : ২ এপ্রিল, ২০১৮ ১০:৩০

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু আজ

অনলাইন ডেস্ক
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু আজ

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। প্রথমদিন এইচএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র, মাদরাসায় আলিমে কোরআন মজিদ এবং কারিগরিতে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ সিটে বসতে হবে।

পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পরীক্ষাসংক্রান্ত অপরাধ দমনে এরইমধ্যে ৯ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পৃথকভাবে পাঠানো হয়েছে আরো কয়েক দফা। নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রথমবারের জন্য ডাবল প্যাকেটে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ওপরের প্যাকেটে বিশেষ সিকিউরিটি টেপ এবং ভেতরেরটিতে আগের মতোই সিলগালা লাগানো হয়েছে। এতকিছুর পরও এরইমধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন প্রচার চলছে। চলছে ফল পরিবর্তনের বিজ্ঞাপন। এ কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

অবশ্য প্রশ্নপত্রের শতভাগ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আমরা আশ্বস্ত করছি যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। দুষ্কৃতকারীরা কোনো ফাঁকফোকর খুঁজে পাবে না। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী খুবই তৎপর। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নকলমুক্ত এবং প্রশ্ন ফাঁসবিহীন পরীক্ষা অনুষ্ঠানে আমরা খুবই কঠোর থাকব। থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। তবে পরীক্ষার্থীরা অনুকূল পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পারবে। তাদের জন্য কোনো ভীতি সঞ্চার হবে না।

ওদিকে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। কর্মসূচি স্থল থেকে সংস্থাটি প্রশ্ন ফাঁস রোধে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ ৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে।

আজ সোমবার ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মাদরাসার আলিমে ১ লাখ ১২৭ জন, কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি বিএমে ১১৭৭৫৪ জন আছে। ঢাকা বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজে ৯৬৯ জন আছে। দেশে-বিদেশে ২ হাজার ৫৪১টি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা হচ্ছে। সারাদেশে ৮৯৪৩ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবারের পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪৪৫১টি কলেজ, ২৭০০টি মাদরাসা, ১৭৭৪টি কারিগরি এবং ১৮টি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট।

এদিকে এতদিন শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতেন। কিন্তু এবার পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য নির্দেশিত কার্যক্রম মনিটরিং করতে যাবেন। সকাল ৯টা থেকে তিনি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে থাকবেন।

ফাঁস ঠেকাতে ৯ নির্দেশনা

পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ আসনে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কথিত কোনো প্রশ্ন পেলেই গ্রেফতার। তবে কেন্দ্র সচিব শুধু একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করবেন। ট্যাগ অফিসার (কেন্দ্রে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা) বা ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় পুলিশ প্রধান ও কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধির সহায়তায় ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। ট্যাগ অফিসার, কেন্দ্র সচিব বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা এবং প্যাকেট অক্ষত ছিল মর্মে সত্যয়ন রাখা। পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ২৯ মার্চ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এছাড়া পরীক্ষায় আরো বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগে দুই সেট প্রশ্নে পরীক্ষা হতো। এবার দুইয়ের অধিক সেট প্রশ্ন ছাপানো হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি স্থানে লটারি করে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে জানিয়ে দেয়া হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব অনুযায়ী ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র দেয়া হবে। আগে দূরত্ব কাছে-দূরে যেটাই হতো, আড়াই ঘণ্টা আগে ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র দেয়া হতো।

উল্লেখ্য, আগামী ১৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। মোট ৩০ কর্ম দিবস লাগছে এবারের পরীক্ষায়। তবে এর ব্যাপ্তিকাল ৪৩ দিন। ৮টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও একটি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নজরদারি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, প্রশ্নের পেছনে ছোটা শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের ধরা হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বিকাশ-রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতাদের সারা দেশে সাড়ে ৭ লাখ এজেন্ট আছে। তাদের কাছে বার্তা পৌঁছানো হয়েছে, সন্দেহজনক লেনদেনকারীদের তথ্য তারা নিকটস্থ থানায় জানাবে। সাধারণত একই নম্বরে বিভিন্নজন একদিনে একাধিকবার অর্থ পাঠালে সেটা সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।