English Version
আপডেট : ১০ জুন, ২০১৭ ০৭:২৩

চাকরির ক্ষেত্রে নিজের প্যাশনকে বুঝুন

মাসুদ রানা
ডেপুটি ম্যানেজার
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ
চাকরির ক্ষেত্রে নিজের প্যাশনকে বুঝুন

২০১১ সাল। তখন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ি। ঝিনাইদহ শহরে এক চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক ভদ্রলোক এসে বললেন, “ তোমার বন্ধুদের সাথে তোমার কথা বলার ধরন আমার খুব ভালো লেগেছে। কার্ড দিয়ে বল্লেন সময় হলে একদিন অফিসে এসো। উনি একটি স্থানীয় এনজিওতে কাজ করেন। একদিন অফিসে গেলাম। উনি ওখানে একটি পার্ট-টাইম চাকরীর প্রস্তাব দিলেন। আমি হ্যা বললাম। বেতন ছিলো ৫০০০ টাকা।কাজটা ভালো লাগলো। 

স্নাতক শেষ করলাম ইতোমধ্যে। বন্ধুরা তখন সবায় মঙ্গোলিয়ার মুদ্রার নাম এবং ১টাকায় ৫টা আপেল হলে পলাশীর যুদ্ধ কত সালে হয় এটা নিয়ে খুব ব্যাস্ত। সবার চোখেমুখে বিসিএস ক্যাডার হওয়া, অন্যান্য সরকারী বা ব্যাংকের চাকরী করার স্বপ্ন। আমিও তাদের মত স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু কেন যেন আমার দ্বারা মুখস্ত করা জিনিসটা হতনা। বার বার মনে হত মঙ্গোলিয়ার মুদ্রার নাম জেনে আমি কি করবো? আর এটা কিভাবে আমার মেধার পরিমাপক হয়! একবার বিসিএস এর ফর্ম তুলেছিলাম, পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিনটা ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এর মাঝে এক ব্যাংকে ভাইভা পর্জন্ত গিয়েছিলাম। অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন করে ব্যাংকের ওই চাকরীটি পাওয়ার জন্য কয়েকলাখ টাকা চাইলো। টাকাও ছিলোনা, ইচ্ছেও ছিলোনা। তারপর ছুটাছুটি বাদ দিলাম!

আমি জগতটাকে দেখতে চাইতাম অন্তত পুরো বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে চাইতাম, নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে চাইতাম, অজানাকে অনুভব করতে চাইতাম, জেলা থেকে পাড়ায় ঘুরে বেরাতে চাইতাম। বুঝলাম বিসিএস, সরকারি বা ব্যাংকের চাকরি আমার প্যাশন নয়। আমার প্যাশন ঘুরাঘুরিতে। 

পার্ট-টাইম যে কাজটা করতাম সেখানে অজানাকে জানার অনেক সুযোগ ছিলো। সুযোগ ছিলো ঘুরাঘুরিরও। ওটাই মনোযোগ দিয়ে করা শুরু করলাম। এক বছরের মাথায় বেতন হলো ১০,০০০। অনেক টাকা তখন আমার কাছে এটা। আরো ছয় মাস পরে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ করার সুযোগ হলো। বেতন ৪০,০০০। মাস্টার্স শেষ না করেই যোগদান করলাম। চাকরি করার পাশাপাশি রাতে যেয়ে দিনে পরীক্ষা দিয়ে আবার রাতে ঢাকায় ফিরে আসতাম। মাস্টার্স শেষ হলো।

এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওখান থেকে জয়েন করলাম ব্র্যাকের হেড অফিসে, সেখান থেকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে এবং বর্তমানে সেভ দ্য চিলড্রেন এ কাজ করছি। ৬ বছরের চাকরি জীবনে এটি আমার ৫ নম্বর চাকরি। 

এবার আসি মুল কথায়। আপনাকে বিসিএস ক্যাডার, বা সরকারী চাকুরে বা ব্যাংকার হতেই হবে এমনটি কেন ভাবছেন! নিজের প্যাশনটা কোথায় খুজে বের করুন। যদি আপনার ব্যাবসা ভালো লাগে তবে সেদিকে যান। যদি নিজে কিছু সৃষ্টি করতে চান, তবে তাই করুন। যদি দোকানদার হতে ইচ্ছে করে তবে তাই হোন। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে অনেক পোস্ট খালি থাকে কিন্তু যোগ্য লোক পাওয়া যায়না। 

স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার ব্যার্থতায় আমি অনেককেই কাঁদতে দেখেছি। বাসা থেকে বাবার কস্টের টাকা চাইতেও বুক ফেটে যেত অনেকের। কি দরকার আপনার ঢাকায় আসার? পড়াশুনা করে চাকরি পেতে চাইলে, ঘরে বসেই সম্ভব বা ভিন্ন কিছু করতে চাইলে সেটাও সম্ভব।  আপনার প্যাশন যদি হয় বিসিএস ক্যাডার হওয়া তবে শুধুমাত্র সেদিকেই নজর দিন, অন্য আর কিছুই নয়। আপনার লক্ষ্য যদি হয় ব্যাংকার হওয়া তবে একদম বিসিএস এর দিকে নজর দিবেননা। লক্ষ্য থাকবে একটায়, কয়েকশত নয়।

হয়তো আমি বিসিএস দিলে হোতনা, আবার হতেও পারতো। কি দরকার বাবা এতো দ্বিধায় যাওয়ায়। যা চেয়েছি, তাই হয়েছি। ইতোমধ্য আমি বাংলাদেশের ৫৩টি জেলায় গিয়েছি, ঘুরেছি, দেখেছি, বুঝেছি, শুনেছি এবং অনুভব করেছি।

(লেখাটি প্রথাগত কোন চাকরীর বিরোধী নয়, বরং যারা প্রথা থেকে বের হয়ে ব্যতিক্রম কিছু করতে চান তাদের জন্য)