জঙ্গি ইস্যুতে বিড়ম্বনার শিকার নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা

গুলশানে একটি প্রতিষ্ঠিত সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন উমর ফারুক (ছদ্মনাম)। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটির পর ১০ জুলাই তার অফিস খুলে। কিন্তু ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে কাজের সুযোগ পাননি ফারুক। কারণ সেদিন সকালে অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাকে রুমে ডেকে নর্থ সাউথের বিষয়ে জানতে চান। নর্থ সাউথে কীভাবে জঙ্গিবাদ বাড়ছে এ বিষয়ে জানতে চান। সিইওর এমন প্রশ্নে বিব্রত হন ফারুক। সেদিন অফিসে সবাই তাকে নর্থ সাউথের ফারুক বলেও সম্বোধন করে। এসব ঘটনায় রিতিমতাে চাপা ক্ষোভ ও অভিমান কাজ করছে তার ভেতর। ফারুকের মতো হাজার হাজার নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে নিবরাস-আবিরের মতো জঙ্গি আর গিয়াস উদ্দিনের মতো অধ্যক্ষরা। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান হোটেলে হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিবরাস। নর্থ সাউথের অনেকেই তার ফুটবল খেলা দেখে মুগ্ধ হওয়ার গল্প করতেন। অথচ নিবরাস ও তার বন্ধুদের হাতেই ২২টি তাজা প্রাণ ঝড়ে গেছে। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত আবিরকে চিনতো শান্তশিষ্ট ‘ইনোসেন্ট’ বালক হিসেবে। তবে তাদের পাপের বোঝা এখন বইতে হচ্ছে নর্থ সাউথের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের। নিজের ভেতর এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে জীবন যাপন করছেন তারা। ফারুক বলেন, শুধু অফিসে নয়, চায়ের দোকানের আড্ডায়ও এখন আলোচনার বস্তু নর্থ সাউথ। কোন কারণ ছাড়া আমাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে বের করতে পাড়ছে না আমার প্রতিষ্ঠান তবে এমন আগামীতে নর্থ সাউথের কোন ছাত্রকে চাকরি দিতে হলে অন্তত ৫ বার ভাববে প্রতিষ্ঠানগুলো। আমানুর রহমান (ছদ্মনাম) নামে আরেক শিক্ষার্থী ২০১৪ সালে নর্থ সাউথে এমবিএ পড়া শুরু করেছিলেন। পারিবারিক কারণে গত ২ বছর ধরে সে সেমিস্টার গ্যাপ দিয়েছেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দীর্ঘদিন ব্রেকে থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়ার সংবাদ শুনে আতঙ্কিত তিনিও। আমানুর বলেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর না হয়ে নর্থ সাউথের উচিত মূল সমস্যাটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। আমাদের পক্ষে কথা বলা। নর্থ সাউথের এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনা ঘটানোর পর নিজের ছেলেকে নিয়েও ভয় হয়। তার ক্যারিয়ার নিয়ে ভয় হয়। অন্তত আগামী ২ বছর সিভিতে নর্থ সাউথ লিখলে আমার ছেলেকে অনেকে আড় চোখে দেখবে। এদিকে সাবেক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নর্থ সাউথের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই চোখে পড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী। আর্চওয়ে গেট থাকলেও ২-৩ জায়গায় চলে তল্লাশি। সাবা করিম (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কারো সঙ্গে কথা বলতেও ভয় হয়। আমার ৬ সেমিস্টার শেষ হয়েছে। পরিবার থেকে নর্থ সাউথ ছেড়ে আশপাশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। জঙ্গিদের মদদে নর্থ সাউথের শিক্ষক : শনিবার রাতে রাজধানীর বারিধারা থেকে নর্থ সাউথের প্রো-ভিসি গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিদের বাড়ি ভাড়া দেয়া এবং পুলিশের কাছে জঙ্গিদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও জঙ্গিদের মদদের অভিযোগ ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষক ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত করিম। পুলিশের কাছে ‘নিজের জীবন বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য’ হওয়ার কথা জানান তিনি।