English Version
আপডেট : ২২ এপ্রিল, ২০১৬ ১৪:৫৭

শিক্ষামন্ত্রী :প্রশ্ন ফাঁসে সফলতা-ব্যর্থতার কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষামন্ত্রী :প্রশ্ন ফাঁসে সফলতা-ব্যর্থতার কিছু নেই

নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) এইচএসসি পরীক্ষার জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রের বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রও একইভাবে যথাক্রমে পরীক্ষার এক ঘণ্টা এবং দুই ঘন্টা আগে ফেসবুকে ফাঁস হয়ে যায়। লাগাতার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কতুটুকু? এমন প্রশ্নের জবাবে উল্টো প্রশ্ন রেখে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বললেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসে সফলতা-ব্যর্থতার কী আছে? প্রশ্নপত্র ফাঁসে সফলতা-ব্যর্থতার কিছু নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তদন্ত করতে হবে। বের করতে হবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আয়োজনে ৪৪তম গ্রীষ্মকালীন এবং ৪৫তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্রীড়া সামগ্রী, সনদ ও চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। তবে খানিকবাদে বোল পাল্টে নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাহারা দিয়া রাইখা রাইখা হলে পৌঁছাইলাম টাইমলি। এরপর মাস্টাররা যদি আউট করে ফেলে আমরা যাবো কোথায়? এখানে আমরা কী করতে পারি? ১৩ হাজার পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে তো আর পাহারা দেয়া সম্ভব না।’ শিক্ষকদের ওপর দায় চাপিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়। ১০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন দেয়ায় নিয়ম। আমি বারবার বলছি, শিক্ষা ব্যবস্থায় কুশিক্ষক চোর-চুট্টারা ঢুকে পড়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে যদি এটুকু সিনসিয়ারিটি না থাকে তাহলে কী করবো? কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। কোনো দুশ্চরিত্রবান শিক্ষক এগুলো কেন্দ্র থেকে ফাঁস করে দিচ্ছে।’ তবে এসব ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারে না- উল্লেখ করে এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তাহলে এর দায়িত্ব কে নিবে? যারা পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত তাদেরই তো দায়িত্ব নিতে হবে। যদি পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এখানে দায়িত্ব এড়ালে তো হবে না। মন্ত্রণালয় কৃতিত্ব নেবে, দায়িত্ব কেনো নেবে না? কৃতিত্ব নিতে হলে দায়িত্বও নিতে হবে। দায়িত্ব, কৃতিত্ব তো আলাদা কিছু না।’ তিনি বলেন, ‘আগের নকলের চেয়ে এখনকার প্রশ্ন ফাঁস আরো ভয়ঙ্কর। আগে নকলটা কিন্তু বাণিজ্য ছিল না। এখন প্রশ্ন ফাঁস করে ব্যবসা করা হচ্ছে। আগে ফলাফল কিনতে পাওয়া যেতো না। এখন টাকা দিলে ফলাফলও পাওয়া যায়। আজকে শিক্ষাব্যবস্থা পুঁজিবাদের করালগ্রাসে পতিত।’ আহমেদ নিলয় নামের একটি ফেসবুক থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। ফেসবুকে যিনি নিজেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি তার টাইমলাইনে লিখেছিলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজকের সকাল বেলার প্রশ্ন সবাইকে ফ্রি দিলাম, শুধুমাত্র প্রমাণ দেয়ার জন্য। পরীক্ষার হল থেকে এসে মিলিয়ে নিও। আর যারা আগের দিন ১০ হাজার টাকা দিতে পেরেছো তাদেরকে একদিন আগে এই প্রশ্নটা দিয়েছিলাম। ‎অনেকই বিশ্বাস করতে পার নাই, তাদের কাছে প্রমাণ দেয়ার জন্য দিলাম।’ বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে পেজে আরও লেখা হয়েছে, ‘এখন কিছু চিটার বাটপার আছে, যারা আমার ফ্রি দেয়া প্রশ্নের কপি মেরে ৫০০/১০০০ টাকা inbox বিক্রি করছে। এদের থেকে সাবধান হন এবং চিটার বাটপারগুলিকে ধরতে সাহায্য করেন।’ বৃহস্পতিবার সকালে প্রশ্নপত্র আপলোড করে আহমেদ নিলয় তার ফেসবুক টাইমলাইনে বুধবার প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে লিখেছেন, ‘সালা সাংবাদিকদের জন্য কিচ্ছু দিতে মন চায় না। অনেক বড় বিপদে আছি, তারপরও সাহায্য না করে পারলাম না। সবাই দোয়া করো। ইনশাল্লাহ যাতে তোমাদের পাশে থাকতে পারি। সকাল বেলা প্রশ্নটা ফ্রি দিলাম।’ আহমেদ নিলয় তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি ফোন নং (01955447307) দিয়ে প্রশ্ন নেয়ার জন্য যোগাযোগ করতে বলেছেন। কিন্তু ওই নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।