English Version
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৪:৪২

সোনালীর জন্য দু'ফোঁটা অশ্রু...

নিজস্ব প্রতিবেদক
সোনালীর জন্য দু'ফোঁটা অশ্রু...

কিশোরীটির নাম সাবিহা আক্তার। বাবা আদর করে ডাকেন সোনালী। আজ শনিবার নতুন স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তার। বাবার কাছে সে নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার বায়না ধরেছিল। বিকেলে মেয়েকে নিয়ে বাবার সে পোশাক কিনতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে বিকেল বিলীন হয়েছে বিষাদময় সকালেই। দানব বাসের চাপায় এই পৃথিবী থেকে মুছে গেছে প্রাণোচ্ছল সোনালীর সব চাওয়া-পাওয়া। পরিবারের কাছে সোনালী এখন সোনালি অতীত ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোনালীর মরদেহ নিয়ে বাবা জাকির হোসেন বিলাপ করছিলেন, নতুন কাপড় কিনলাম ঠিকই, কাফনের কাপড়। জাকির হোসেন জানান, ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নরসিংদী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে। আর মেয়েটি গোল্ডেন এ পেয়েছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ছিল, কিন্তু সব কেড়ে নিল বাস। আমি জানি যে এর বিচার পাব না। বিচার হবে না।’ সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের চাপায় মারা যায় সোনালী। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সেগুন বাগিচার বেগম রহিমা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল সোনালী। সে তেজগাঁও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। আজ সকালে সেগুনবাগিচার বাসা থেকে বের হয়েছিল নতুন স্কুলে ভর্তির কাজ সারতে। কিন্তু স্কুলে আর পৌছাতে পারেনি। তার আগেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সোনালী। সোনালীর সহপাঠী ফারজানা কবিতা বলে, শুধু পড়াশোনায় নয়, গান, সেলাই, খেলাধূলায় সোনালী প্রথম হতো। প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুষ্ঠান হলে গান গাইত। সেলাই স্কুলে প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে একটি সেলাই মেশিন পেয়েছিল। যখন ও মনে করত যে প্রথম হবে, সেটি সোনালী করেই অর্জন করেই ছাড়ত। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান বলেন, নিহত স্কুলছাত্রীর সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রমনা জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যথাযাথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। পরে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল শুরু হয়। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহীম বলেন, ৮ নম্বর বাস স্কুলছাত্রী সোনালীকে চাপা দেয়। বাসটি আটক করা হয়েছে। চালককে ধরার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে। নিহত ছাত্রীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।