চূড়ান্ত হচ্ছে শিক্ষা আইন

আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী সভায় মাধ্যমে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষা আইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আইন না থাকার কারণে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে এমপিও দেওয়া কিংবা বাতিল করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি জানান দীর্ঘদিন ধরে এই আইন নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিভিন্নজনের পরামর্শ, মতামত নেয়া হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই আইনটি চূড়ান্ত করা হবে।
শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, আজকের সভায় শিক্ষা আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত হলে প্রক্রিয়া অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানো হবে। এক মাসের মধ্যে এটা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।
শিক্ষা আইনের খসড়াটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও এতে কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো প্রস্তাবনা নেই। শুধুমাত্র বলা হয়েছে, সরকার প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রশ্ন ফাঁসের মত বড় অপরাধের ক্ষেত্রেও লঘু শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি চার বছর কারাদণ্ডের বিধান নিয়ে সমালোচনা হলেও খসড়ায় সেটাই বহাল আছে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস করলে কিংবা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে বা সহায়তা করলে সর্বোচ্চ চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি গত অক্টোবরে সবার মতামত গ্রহণের জন্য অনলাইনে প্রকাশ করা হলে এই শাস্তির বিধান নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বারবার যেখানে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে সেখানে কঠোর শাস্তির বিধান না করে তা কমানো হয়েছে বলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এ প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধের জন্য ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে নির্দিষ্ট আইন আছে, নতুন করে কিছু করার আর প্রয়োজন নেই। বাস্তবায়নই আসল কথা।

প্রস্তাবনা অনুসারে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, এক বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা স্তরের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফিও সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য একটি ‘রেগুলেটরি কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নিবন্ধন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করা যাবে না। বর্তমানে একজন ব্যক্তি চারটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত কিংবা মনোনীত হতে পারেন। এমনকি তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নতুন খসড়া শিক্ষা আইন অনুসারে এক ব্যক্তি দুটির বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। ব্যবস্থাপনা কমিটির জন্য আলাদা বিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিও রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন শিশুকে কোনো ধরনের মানসিক নির্যাতন বা শারীরিক শাস্তি প্রদান করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা তিন মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান, অনগ্রসরতা, দূরত্ব বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের শাস্তি রাখা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই শাস্তি ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, একটি টেকনিক্যাল স্কুল ও একটি সরকারি কলেজ স্থাপন অথবা বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার কথা বলা হয়েছে।
দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রেখে গাইড ও নোট বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক পুস্তক প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের অপরাধে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রচলনের কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-কে ভিত্তি ধরে এই শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করার কথা।
তথ্যসূত্রঃ কালের কণ্ঠ