English Version
আপডেট : ২৯ মে, ২০২১ ১৪:৪২

অনেক প্রশ্নেরই জবাব নেই নুসরাতের কাছে

অনলাইন ডেস্ক
অনেক প্রশ্নেরই জবাব নেই নুসরাতের কাছে

মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার বাদী তার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া তদন্তকারীদের অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারেননি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই নুসরাতের রহস্যজনক ভূমিকা নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাকে আইনের আওতায় এনে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করলে অজানা অনেক তথ্যই জানা যাবে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে নুসরাতকে নিয়ে ভাই, চাচাসহ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। এই পরিবারটির আজকের পরিণতির জন্য তারা নুসরাতকেই দায়ী করছেন। এ বিষয়ে নুসরাতের বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নুসরাতের অতিলোভী চরিত্রের কারণেই মুনিয়ার এই পরিণতি।’

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মুনিয়া পালিয়ে বিয়ে করার পর তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন নুসরাত। এরপর ২০১৬ সালে নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে মুনিয়াকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। কাকরাইলের সিনেমাপাড়ার অনেকের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় করিয়ে দেন নুসরাত। এমনকি যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গেও ছোট বোনকে পরিচয় করিয়ে দেন। ঢাকায় আসার পর অভিনেতা বাপ্পীরাজের সঙ্গে প্রেম হয় মুনিয়ার। তবে মুনিয়া রাজি থাকার পরও নুসরাতের বিরোধিতার কারণেই বাপ্পীরাজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি।

মুনিয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে নুসরাত বরাবরই বলেন, ‘সে আমার সন্তানের মতো ছোট বোন।’ কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুনিয়ার বখে যাওয়া ও বেপরোয়া জীবনের জন্য তিনিই দায়ী। বোনকে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এনে অভিভাবকহীন অবস্থায় কেন ছেড়ে দিলেন, এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নুসরাত। এরই মধ্যে গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত বলেন, ‘মুনিয়া আমার অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’

তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, ২০১৯ সালে মুনিয়া কলেজে ভর্তি হলেও ক্লাস করেছেন মাত্র পাঁচ-ছয় দিন। কলেজছাত্রী পরিচয় দিয়ে মুনিয়াকে অভিজাত এলাকায় রাখার জন্য প্রথমে মিরপুর, পরে বনানী এবং সবশেষে গুলশানে বাসা ভাড়া করেন নুসরাত। সেসব বাসায় কারা যেত, কাদের সঙ্গে মুনিয়ার সখ্য ছিলÑ এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিচ্ছেন না নুসরাত।

তদন্তে দেখা গেছে, মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বাসাভাড়া নিতে নুসরাত ও তার স্বামী জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেন। বাড়ির মালিককে নুসরাত তার স্বামীর পরিচয় দেন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে। বাড়ির মালিক নুসরাতের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন পুলিশের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজের লোভ থেকে বোনকে টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন নুসরাত। মুনিয়ার প্রথম বিয়ের পর মামলা করে আদায় করা টাকাও আত্মসাৎ করেন তিনি। এ ছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করে টাকা আদায়ের পর ‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকা আদায়ের কৌশল রপ্ত করেন নুসরাত। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা কামানোর নেশা ধরে যায় তার (নুসরাত)। এ নেশা থেকেই ভাই ও চাচার বিরুদ্ধেও মামলা করেন নুসরাত।

তারা আরও বলেন, মুনিয়ার অবাধ চলাফেরা ও বিভিন্ন জনের সঙ্গে মেলামেশার বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি তার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ। এ নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে দুই বোনের কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে যান তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের সঙ্গে মুনিয়ার বিভিন্ন চ্যাটের স্ক্রিনশট ও টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়েও নুসরাত নীরব রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান, শারুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ভাইয়ের (সবুজ) করা মামলার বিষয়েও কোনো কথা বলছেন না নুসরাত। মুনিয়ার সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালকদের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলছেন না তিনি। এ ছাড়া থানায় যাওয়ার সময় ব্যবহার করা দামি গাড়িটি কোথায় পেলেন, পুলিশ আসার আগেই মুনিয়ার বন্ধ ঘরের দরজা কেন খুললেন, কেন তিনি অনেক নথিপত্র লুকিয়েছেন, নতুন করে গুছিয়ে পরিকল্পিত মামলার নাটক সাজানো এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন  ও কোনো প্রমাণ ছাড়াই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে মামলা করাÑ এসব প্রশ্নেরও কোনো জবাব দিচ্ছেন না নুসরাত।

নুসরাতের রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নুসরাতকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুনিয়ার বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ছাড়া তার ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল কল লিস্ট থেকেও অনেক নতুন তথ্য সামনে আসবে।

গত ২৬ এপ্রিল নুসরাত ও তার স্বামীর গুলশানের ভাড়া বাসা থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা হয়। এরপর ২ মে মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হত্যা মামলা করেন। দুটি মামলা মাথায় রেখে মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।