English Version
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২১ ১৫:৩৩

চোরাচালানে এবার ‘স্বর্ণমানব’

অনলাইন ডেস্ক
চোরাচালানে এবার ‘স্বর্ণমানব’

ফ্রি বিদেশ ভ্রমণ, সঙ্গে বেশ কিছু টাকা। এমন প্রলোভনে পড়ে অনেক দরিদ্র মানুষ জড়িয়ে পড়ছে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে। ‘স্বর্ণমানব’ খ্যাত এসব চোরাচালানি স্বর্ণ বহন করছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেক্টমে (পায়ুপথ)।

এজন্য তাদের নিতে হয় ‘বিশেষ’ প্রশিক্ষণ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নেমে পড়ে কাজে। তবে তারা শুধুই সোনা চোরাচালনের বাহক মাত্র। তারা নিজেরাও জানে না কারা এই স্বর্ণের মালিক। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও মূল চোরাকারবারিরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর জেলের ঘানি টানে স্বর্ণমানবরা।

গত বছর শরীফ আহমেদ নামে কুমিল্লার এক মুদি দোকানদারকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক কেজি ২শ গ্রাম ওজনের ১২টি স্বর্ণের বারসহ আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তার পায়ুপথ থেকে স্বর্ণগুলো বের করা হয়। তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে আটকের আগে তিনি ১৬ বার মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। পায়ুপথে বিশেষ কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ পাচার করছিলেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেন তিনি।

একই বছর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সারওয়ার আলম নামে দুবাই থেকে আসা আরেক জনের পায়ুপথ থেকে সোয়া কেজি ওজনের ৯টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গোয়েন্দারা জানান, প্রথমে স্বর্ণের বারগুলো স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে কনডমের ভেতর ঢুকানো হয়। পরে আবার সেটি স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে প্রবেশ করানো হয় পায়ুপথে। তবে একদিনেই স্বর্ণমানব হওয়া যায় না।

এজন্য বেশ কিছুদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। স্বর্ণের বারের আয়তন ও ওজনের অন্য কোনো ধাতু ঠিক একইভাবে আগে প্রবেশ করানো হয় নির্বাচিত বাহকদের পায়ুপথে। প্রচণ্ড কষ্টসাধ্য এই কাজটি রপ্ত করতে অনেক সময় লেগে যায়।

পাচারকারীদের মূল লক্ষ্য থাকে পায়ুপথে স্বর্ণ নিয়ে যেন বাহকরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে। স্বাভাবিক হাঁটাচলা ও বসা রপ্ত করার পরই তারা হয়ে ওঠে ‘স্বর্ণমানব’। যে যত বেশি স্বর্ণের বার নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে পাচারকারীদের কাছে সেই হয়ে যায় ততবড় ‘স্বর্ণমানব’। তার ‘বাজারদর’ও থাকে তত বেশি। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিদেশে।

১২টি স্বর্ণের বার নিয়ে আটক শরীফ আহমেদ গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মালয়েশিয়াতে।

এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) আলমগীর হোসেন বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণির। তারা জানেও না কারা এসব স্বর্ণের মালিক। এসব ব্যক্তিদের ফ্রি বিদেশ ভ্রমন ও নগদ অর্থের লোভ দেখানো হয়।

তিনি জানান, স্বর্ণমানবদের ধরা খুব সহজ নয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা না থাকলে তাদের আটক করা যায় না। আবার আটকের পর তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ বের করাটাও সময়সাপেক্ষ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার তাদের রেক্টম (পায়ুপথ) থেকে স্বর্ণ বের করতে প্রথমে কলা-রুটি ও পানি খাওয়ানো হয়। এভাবে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর বের৪ হয়ে আসে স্বর্ণ।

শুধু উড়োজাহাজেই নয়, স্থলপথেও স্বর্ণ পাচার করছে স্বর্ণমানবরা। সীমান্ত পার হয়ে এসব স্বর্ণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে চোরাইপথে আসা গরুর মূল্য পরিশোধ করা হয় স্বর্ণ দিয়ে। চুয়াডাঙ্গা থেকে শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির রেক্টম থেকে ৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে বিজিবি।

লাভলু ব্যাপারী নামে আটক আরেক স্বর্ণমানব জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ঢাকা থেকে প্রতিটি স্বর্ণের বার কলকাতায় নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাকে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। দুবাই, মালয়শিয়া বা সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণের বার আনলে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকাও দেওয়া হয় বাহকদের। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক বাহকরা রেক্টমে বেশি স্বর্ণ বহন করতে পারায় বেশি টাকা পায় বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।