English Version
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ১৬:১৬
সূত্র:

ক্যাসিনোকান্ডে পলাতক দুই ভাই রুপন-এনু গ্রেপ্তার

ক্যাসিনোকান্ডে পলাতক দুই ভাই রুপন-এনু গ্রেপ্তার

ক্যাসিনোর টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ায় অভিযুক্ত রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই একই কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করার সময় ৪০ লাখ টাকা, ১২টি মোবাইল ফোন, ২২টি বাড়ির দলিলপত্র ও বিভিন্ন ব্যাংকের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। সিআইডির ডিআইজি (অর্গাইজড ক্রাইম) ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর এনু-রুপন ও তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে তিন সিন্ধুকে ৫ কোটির বেশি টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণ (৭৩০ ভরি) ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। সিন্ধুকগুলোর মালিক এনু-রুপন প্রায় চার মাস আত্মগোপনে থাকার পর গ্রেপ্তার হলেন। তারা দুজনই ফকিরাপুলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার। সেই ক্লাব থেকে প্রতি রাতে তারা টাকার বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরতেন বলে খবর বের হয়। তাদের গ্রেপ্তারের পর গে-ারিয়া ও ঢালকানগর এলাকার মানুষ আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছিল।

সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজ এবং ৯১টি ব্যাংক হিসেবে ১৯ কোটি টাকার কাগজপত্র পেয়েছে। ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা আছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি আরও জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুর দিকে গেন্ডারিয়ার বানিয়ানগর ও মুরগিটোলার বাসায় অভিযানের পর গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে সাতটি মামলা করে। র‌্যাবের ওই অভিযানের আগেই এনু-রুপন এবং তাদের দুই সহযোগী হারুন অর রশিদ ও আবুল কালাম গা ঢাকা দেন। মামলাগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনের চারটি মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। মামলার তদন্তে দেখা যায়, র‌্যাবের অভিযানের পর এনু-রুপন প্রথমে কক্সবাজার চলে যান। সেখান থেকে তারা মিয়ানমার অথবা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে তারা কেরানীগঞ্জে ফিরে আসেন। সেখানে তাদের এক কর্মচারীর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। তাদের কাছে ৪৬ লাখ টাকা ছিল। এ টাকা দিয়ে তারা ভুয়া পাসপোর্ট করে ভারত হয়ে অন্য দেশেও যাওয়ার চেষ্টা করেন।

সিআইডি আরও জানায়, আদালতে হাজির করে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। এদের পেছনে কারা হোতা ছিল তা বেরিয়ে আসবে। এনু ও রুপন মূলত নেপালের নাগরিকদের মাধ্যমে ঢাকায় ক্যাসিনোর আধুনিক সরঞ্জাম ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাদের যত সম্পত্তি, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি সবই ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করা।

এদিকে মমিনুল হক সাঈদ ক্যাসিনো-কাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকলেও তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ বলেন, ‘সাঈদের নামে সিআইডিতে মানি লন্ডারিং মামলা নেই। তদন্ত চলছে। যদি কখনো নাম আসে তাহলে আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

এনু-রুপনের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করেছে। গত বছর ২৩ অক্টোবর সংস্থাটির ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

এনু-রুপনের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত দলিলপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, পুরনো ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় এনু ও রুপনের নামে একের পর এক হিসাব খোলা হয়। সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডান্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। বড় অঙ্কের অর্থ জমা রাখার কারণে ব্যাংকগুলো এনু-রুপনকে বিশেষ ব্যাংকিং সুবিধা দিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় মাতে। বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে এনু-রুপন ভিআইপি গ্রাহক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর অভিযানের সময় নিজ বাড়ি ও বন্ধুর বাসা থেকে এনুর তিনটি সিন্দুক জব্দ করে র‌্যাব। ওই সিন্দুক থেকে ৫ কোটি টাকা, ৭৩০ ভরি সোনা ও ৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই অভিযানের কিছুদিন আগে বংশালের ইংলিশ রোডের ‘শাবনাজ স্টিল কোং’ থেকে বিশেষ ফরমায়েশ দিয়ে ৩২টি সিন্ধুক কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। সিআইডি সেগুলো খতিয়ে দেখছে।