হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায় আজ

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন আজ বুধবার ধার্য রয়েছে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান দুপুরে এ রায় ঘোষণা করবেন।
গত ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন।
মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সারওয়ার খান (জাকির) বলেন, আসামিরা বাংলাদেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতৃত্বে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে দেশি-বিদেশিদের হত্যা করে। ওই হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুজন মারা যান। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আদালত মামলাটির চার্জগঠন করেন। চার্জগঠন হওয়ার পরে মোট ৫২ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষ করা হয়। মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত করা হয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থাৎ কারা ঘটনা ঘটিয়েছে, সেখানে কে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, অর্থ দিয়েছে, কে কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা চলে এসেছে। আসামিরা সবাই এ ঘটনার সাথে সরাসরিভাবে জড়িত রয়েছে। সেই কারণে আমরা আদালতের কাছে বলেছি সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬ (২) উপধারায় ১ এর ধারা মতে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সকল আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড আশা করেছি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, মামলা যুক্তিতর্ক শেষ করে রায়ের জন্য রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য, আলামত, তদন্তকারীর রিপোর্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। মোট ৪ দিনের যুক্তিতর্কে আমরা সেই বিষয়গুলো আদালতকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যে গড়মিল রয়েছে সেই কথা তুলে ধরেছি।
মামলার ৬ জন আসামির দেয়া ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি যে দিয়েছিলো তা শেখানো। সেই কথা অনেকবার আসামিরা নিজে মুখে আদালতে বলেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত চার্জশিটে ও অন্যান্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আশা করি আদালত ন্যায় বিচার করবেন। আসামিরা খালাস পাবেন।
মামলার মোট আসামির সংখ্যা হচ্ছে ৮ জন। আট জন আসামির মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা হলেন- অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যামশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম। আসামিরা সকলেই কারাগারে রয়েছে।
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের মধ্য দিয়ে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। প্রায় এক বছর পর গত ২৭ অক্টোবর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। গত ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ শুনানিতে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
চলতি মাসের ৬ নভেম্বর মামলায় রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ১৭ নভেম্বর শেষ করে রায়ের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন বিচারক।
২০১৮ সালের ১ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলার চার্জশিট ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে দাখিল করেন। এরপর ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত এ মামলা ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
চার্জশিটে ২১ জন আসামির নাম থাকলেও তাদের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা যায়। এই ১৩ জনকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি আট জনকে অভিযুক্ত করা হয় চার্জশিটে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ইতালির নয় জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি দু’জন নাগরিক নিহত হন।
রাতভর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্ড এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। পরে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে মারা যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান। পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।