English Version
আপডেট : ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০৭:৫৯
সূত্র:

কাউন্সিলর রাজিব ও পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কাউন্সিলর রাজিব ও পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান (পাগলা মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে দুদক।

পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি এবং রাজিবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা মামলা হয়েছে। সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে এবং সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী রাজিবের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা করেন।

২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭(১) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় (ক্ষমতার অপব্যবহার) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে, যুবলীগের সাবেক নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে তৃতীয় দিনের মতো দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের পাঁচ সদস্যের টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে জি কে শামীম ও খালেদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ফিরিস্তি দিয়েছেন। কীভাবে কোন কোন নেতাকে ম্যানেজ করে তিনি এককভাবে গণপূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন।

এ কাজে সাবেক দুই মন্ত্রীর সহায়তা পেয়েছেন বলেও শামীম তথ্য দেন। এ ছাড়া সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে সম্রাটসহ সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তিনি ইয়ংমেন্স ক্লাব চুক্তিতে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ক্যাসিনো ব্যবসায় তিনি বেশ কয়েকজন নেতার আশীর্বাদ পেয়ছেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগ, স্কুলের ভবন নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজে তার এক ধরনের আধিপত্য ছিল। এ

মনকি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য, স্কুলের প্রিন্সিপাল, শিক্ষক আবদুস সালাম ও তার ভাই আতিকের সঙ্গেও তার লেনদেনের সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়া রাজধানীর সবুজবাগ, শাহজাহানপুর খিলগাঁও, মতিঝিলি পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় খালেদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতেন এ বিষয়টিও জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে।

দুদকের টিম জি কে শামীম ও খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে যেসব তথ্য পাচ্ছে, তাতে যাদের নাম আসছে তাদের সম্পর্কেও অনুসন্ধান চালাবে।

পাগলা মিজানের মামলা : এজাহারে বলা হয়েছে, ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের ৩০ কোটি ১৬ লাখ টাকার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেডিবাঁধ সংলগ্ন বসিলা রোডে হাবিব প্লাজার ৩০ কাঠা জমি দখল করে তার ওপর নির্মাণ করা মার্কেট।

একই জায়গায় আরও প্রায় ৪৮২ কাঠা দখল করে প্রায় ২০টি টিনশেড দোকান, ঢাকার লালমাটিয়া বি-ব্লকে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে স্বপ্নপুরী হাউজিং গড়ে তোলা এবং সেখানে ভবন তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করা। এ ছাড়া লালমাটিয়ায় ২৪/এ নং হোল্ডিংয়ে প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর পপুলার অর্কিড নামের ছয় তলা ভবন।

যার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা, হোল্ডিং নং-২৪/বি লালমাটিয়ার প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ কোটি টাকায় ইমপেরিয়াল গার্ডেন নামীয় ৬ তলা ভবন নির্মাণ, হোল্ডিং নং ২৪/সি ও ২৪/ডি লালমাটিয়ায় ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ কোটি টাকায় দুই ইউনিটবিশিষ্ট ৬ তলা বাড়িতে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব সম্পদ অর্জনে তিনি প্রায় ১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। তার আয়কর নথির তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের হোল্ডিং নং-২৪/সি ও ২৪/ডি ১৩৫০ বর্গফুটবিশিষ্ট ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ হাবিবুর রহমানের সর্বমোট ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

যা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ছাড়া নগদ টাকার চেক ও এফডিআরসহ ৯ কোটি ২৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

রাজিবের মামলা : এজাহারে বলা হয়, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিব ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করেছেন। এই অবৈধ সম্পত্তির মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর প্লটে কোটি টাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মোহাম্মদপুরের কাটাসুর ৩নং রোড, ব্লক নং : এ, প্লট নং : ৫০-এ তার নিজের নামে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে একটি প্লট ক্রয়, মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ে ৬নং রোডের শেষ মাথায় পশ্চিম-দক্ষিণ পার্শ্বে বেড়িবাঁধ প্রধান সড়কে ২ কোটি টাকায় নির্মিত পাঁচ তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ে ই-ব্লক, রোড নং-২, হোল্ডিং নং-৪১/১০/ই-তে ১ কোটি টাকায় তিন তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ হাউজিং রোড নং : ৪/বি, চাঁদ উদ্যান, হোল্ডি নং-১৮ (ছায়াবীথি) এলাকায় দেড় কোটি টাকায় নির্মিত চার তলা বাড়ি, ৫ নম্বর রোডে দেড় কোটি টাকায় নির্মিত চার তলা বাড়ি, ৬ নম্বর রোডে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় নির্মিত ৬ তলা বাড়ি রয়েছে।

এ ছাড়া তারিকুজ্জামান রাজিব সিলিকন হাউজিংয়ের শেয়ারহোল্ডার এবং শ্যামলাপুর ওয়েস্টার্ন সিটির পরিচালক। মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৬নং রোডে প্রায় ৬ কাঠা জমি ব্যাডমিন্টন খেলার কোট হিসেবে দখল করে রেখেছেন। যেখানে প্রায় ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। রাজিবের চাচা মো. ইয়াছিন হাওলাদার ও অন্যের নামে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ করেছেন বলেও মামলায় বলা হয়।