সুপারস্টোর -ভোক্তা ঠকানোর কারখানা

নিরাপত্তা, বিনোদন আরামদায়ক পরিবেশ ও পণ্য প্রাপ্তির সহজলভ্যতার লক্ষ্য নিয়ে উন্নতবিশ্বে সুপারস্টোরের যাত্রা শুরু হয়। সারা বিশ্বের মত এদেশেও ধীরে ধীরে সুপারস্টোরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের নামী-দামী সুপারস্টোরগুলোর ব্যবসায়ীক পরিধিও বেড়ে চলেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশের সুপারস্টোরগুলো ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি, বিস্তৃত করে চলেছে তাদের শোষণের ডালপালা।
সুপারস্টোর সাধারণত সাপ্লাই চেইনের মাধ্যরমে বৃহৎ কোম্পানীগুলো থেকে পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। অন্যদিকে, পণ্য প্রস্তুত কারক কোম্পানীসমূহ তাদের পণ্যের প্রচার ও ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সুপারস্টোরের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কে প্রাধান্য দেয়। যে কারণে কোম্পানীগুলোকে ক্রেডিট (ঋণ) সুবিধা দিতে বাধ্য করা হয়। শুধুমাত্র ক্রেডিট (ঋণ) সুবিধাই নয়, কোম্পানীগুলোকে পণ্যভেদে বিক্রয়মূল্যের উপর নূন্যতম ১৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা প্রদান, শেলফে পণ্য প্রদর্শনের জন্য মাসিক স্পেস রেন্ট হিসাবে ৫,০০০ টাকা ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া প্রদান, একজন ব্র্যান্ড প্রমোটরের (বেতনের পাশাপাশি) শুধুমাত্র উপস্থিতির জন্য প্রতিদিন ৩০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত ফি প্রদান, ব্র্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস (এক্স ব্যানার, ডেংলার, শেলফ টকার ইত্যাদি) প্রদর্শনের জন্য মাসে ১০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া প্রদান করতে হচ্ছে। যেখানে একজন মুদি দোকানদার তার সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একই উৎপাদকের পণ্য বিক্রয় ক েরকম লাভবান হচ্ছে, সেখানে সুপারস্টোরগুলো উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে কম মূল্যে কেনা একই পণ্য বিক্রয় করে অধিক মুনাফা লাভ করছে। শুধুমাত্র পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে মুদি দোকানে পণ্যটি ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে সুপারস্টোরে ক্রেতা নিজে পণ্য বহন করছে, কখনো লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভ্যাটসহ নির্ধারিত মূল্যের সাথে বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে শেলফ ভাড়া দেয়ার পরও সুপারস্টোরের শেলফের দাম উঠছে না। নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও এরা নামমাত্র সংখক কর্মী নিয়োগ দেয়। দৈনিক উপস্থিতির জন্য ফি আদায়ের পরও কোম্পানী কর্তৃক নিয়োগকৃত ব্র্যান্ড প্রমোটর দিয়েই শেলফে পণ্য সাজানো, পণ্য বহন ও বিক্রয় কাজে চালিয়ে নেয়। প্রতি মাসে শেলফের ভাড়া, ব্র্যান্ড প্রমোটরের উপস্থিতির টাকা এবং অতিরিক্ত মুনাফা প্রদানের পর উঠছে না পণ্যের উৎপাদন মূল্য, লাভ তো দূরের কথা।
সুপারস্টোরে ২০-২৫ শতাংশ টার্নওভারের জন্য মোটা অংকের বাজেট রাখতে হচ্ছে কোম্পানীগুলোকে। স্বাভাবিকভাবেই যার প্রভাব পড়ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং গুণগতমানের উপর। যে কারণে ছোট বা মাঝারি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। ফলে পণ্যের গুণগতমান থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে ক্রেতাকে।
এখানেই শেষ নয়, প্রাইস ট্যাগ টেম্পারিং (মূল্য পরিবর্তন) মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, ওজনে কম দেয়া সহ বিভিন্ন ধরনের ভোক্তা হয়রানি রয়েছে সুপারস্টোরের নিত্যদিনের আয়োজনে। দেখতে চকচকে হলেও এদেশের সুপারস্টোরগুলো পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখড়ায়।
ঝামেলাহীন, আরামদায়ক পরিবেশে কেনাকাটার আশায় বেশি দাম দিয়ে মানহীন, ওজনে কম, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কিনছি না তো? -ভাবতে হবে আরেকবার।