স্ত্রীকে ৫বার তালাক, ৬বার বিয়ে করে তুফান!

বগুড়ায় কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণের পর তার এবং তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মূলহোতা শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকার নিজের স্ত্রীকে পাঁচবার তালাক দিয়েছেন। আর ষষ্ঠবারের মতো বিয়ে করে এখন সংসার করছেন।
মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এর মধ্যে এই তুফান সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম একেক করে উঠে আসতে শুরু করে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, শহর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক ও বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুরের কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে তুফান সরকার (২৫) স্ত্রী আশা খাতুনকে গত নয় বছরের পাঁচবার তালাক দিয়ে ছয়বার বিয়ে করেন। নিজেদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলেই তুফান ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী আশাকে তালাক দিতেন। আবার মৌলভী ডেকে এনে পুনরায় বিয়ে করতেন। এমন তথ্য রিমান্ডে তুফান পুলিশকেও দিয়েছেন। তুফান সরকারের স্ত্রীর বড় বোন স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি। বর্তমানে তুফান সরকার কাশিমপুর কারাগারে আর বগুড়া কারাগারে রয়েছেন তার স্ত্রী, স্ত্রীর বড় বোন কাউন্সিলর, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং সহযোগীসহ মোট নয়জন। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ে দুজনকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তিন দফায় তুফান সরকারসহ সহযোগীদের রিমান্ডে এনে অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে তুফান সরকার এবং তার পরিবারের সদস্যরা যে অপকর্মে জড়িত তার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। রিমান্ডে তুফান সরকার স্ত্রী আশা খাতুনকে পাঁচবার তালাক দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিয়ে করার তথ্য দিয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়। উল্লেখ্য, বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণ ও তার মাকে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় আসে তুফান-রুমকি পরিবার। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের পরিচয় হয়। এসএসসিতে পাশ করলেও জিপিএ-৫ না পাওয়ায় ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না ওই ছাত্রী। বিষয়টি জানার পর তুফান তাকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে জানায়। এরপর গত ১৭ জুলাই সকালে তুফান তাকে ফোন করে। কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য শহরের চকসুত্রাপুরে তার বাড়িতে ডেকে তুফান ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্ষিতা ও তার মাকে ২৮ জুলাই ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকারের স্ত্রী, স্ত্রীর বড় বোন কাউন্সিলর রুমকিসহ অন্য সহযোগীরা। এ ঘটনা প্রকাশের পর মূলহোতা শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারসহ চার সহযোগীকে প্রথম দিনে গ্রেফতার করে তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে দেন আদালত। এর পরদিন কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকিকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এছাড়াও তুফানের স্ত্রী আশা, তুফানের শাশুড়ি রুমি ও শ্বশুর জামিলুর রহমান, সহযোগী জিতু, মুন্না ও নরসুন্দর জীবন রবিদাসকে দুদিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। তুফান সরকারকে এরইমধ্যে শহর শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এঘটনায় তুফানের বড় ভাই আবদুল মতিন সরকারকে শহর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কার করা হয়। বুধবার দ্বিতীয় দফায় তুফান ও তার সহযোগী মুন্নাকে দুদিনের এবং তুফানের স্ত্রী আশা বেগম, শাশুড়ী রুমা বেগমকে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর শুক্রবার তুফান সরকারকে তৃতীয় দফায় এবং কাউন্সিলর রুমকিকে দ্বিতীয় দফায় দুদিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তুফানের সহযোগী মুন্না আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। রোববার ধর্ষক তুফান এবং রুমকিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যাম সুন্দর রায় না মঞ্জুর করেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারাগার ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। গত ১৯ আগস্ট কারাগারে মাদক সেবনের অভিযোগে বগুড়া কারাগার থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে বগুড়া থেকে তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়।