বড়ই ভয়ঙ্কর হাসু-কাসুর ‘স্টার লীগ’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এবার ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের গড়ে তোলা ‘স্টার লীগ’ বড়ই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এ সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসেম হাসু তিনটি খুন, চারটি অস্ত্রসহ ১৭ মামলার আসামি।
সিনিয়র সহসভাপতি কাসুর বিরুদ্ধে খুন, জবরদখল, লুটপাট, ছিনতাই-ডাকাতিসংক্রান্ত ১৪টি মামলা ঝুলছে। সাধারণ সম্পাদক লম্বু কাজলের বিরুদ্ধে আছে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র আইনের ১১টি; সাংগঠনিক সম্পাদক কিলার সোহেলের বিরুদ্ধে ১৩টি এবং কোষাধ্যক্ষ হারুনের বিরুদ্ধে আছে ১২টি মামলা। এমনকি সাধারণ সদস্য হিসেবে স্টার লীগে স্থান পাওয়া ঠাণ্ডুর মাথায়ও ঝুলছে ৯টি মামলা। এভাবেই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৫ সদস্যের সবাই একাধিক মামলার আসামি। ইতিমধ্যে স্টার লীগের ব্যানারে তারা শেরেবাংলানগর, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, মিরপুর থানা ও আশপাশ এলাকায় খুন, চাঁদাবাজি, জায়গাজমি জবরদখল, হামলা-ভাঙচুরসহ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তুলতে সংঘবদ্ধ এ সন্ত্রাসীরা প্রায়ই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এসব ঘটনায় স্থানীয় অধিবাসীসহ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে সীমাহীন আতঙ্ক। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চার-পাঁচ মাস ধরে হাসু-কাসুর সিন্ডিকেট গোটা এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। শুধু শেরেবাংলানগরেই এরা ডিস ব্যবসায়ী জামিল, বাবু, মিল্টনসহ অন্তত চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সন্ত্রাস সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, মাদক ও অস্ত্র আইনে প্রায় দুই ডজন মামলা মাথায় নিয়েও তারা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ধার্য করা চাঁদা পরিশোধ না করে কারও দোকানের ঝাঁপি খোলার সাহস নেই, মাসিক চাঁদা শোধ না করে কেউ বাড়িঘরের নির্মাণকাজেও হাত দিতে পারে না। শেরেবাংলানগর থানা এলাকায় ত্রাসের রাজত্বের বিরোধিতা করে কারও যেন টিকে থাকার উপায় নেই। স্থানীয় দোকানিরা বলেন, ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার জন্য মোল্লাপাড়ায় সিসি ক্যামেরা বসালে হাসু ক্ষিপ্ত হয়ে সব ক্যামেরা খুলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের অনবরত হুমকি, হামলা ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আবাসন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। কে এই হাসু-কাসু? : আগারগাঁওয়ের ডিস ব্যবসায়ী মিল্টন হত্যা মামলায় ৩১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খুনি হাসু-কাসুুর উত্থান ছিল নিছক রিকশা চোর হিসেবে। নব্বইয়ের দশকে আগারগাঁও বস্তিতে রিকশা চোরদের সর্দার হিসেবেই ছিল তার পরিচিতি। ওই সময় হাসু-কাসুর দুই ভাই রিকশা চুরির বিশাল সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন। আগারগাঁও বস্তিতে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবাধ যাতায়াতের ফলে তৎকালীন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে হাসু ও কাসুর সখ্য গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড় শুরু হলে সন্ত্রাসীরা তাদের অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র হাসু ও কাসুর রিকশা গ্যারেজের মধ্যে মাটি খুঁড়ে রেখে দেশ ছেড়ে পালায়। পরে এসব অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র পুঁজি করেই রিকশা চোরা হাসু-কাসু রাতারাতি সন্ত্রাসী বনে যায়। বাড়তে থাকে তাদের অপরাধের পরিধি, জড়িয়ে পড়ে খুন-খারাবি, মাদক বাণিজ্যে। অস্ত্রবাজ বাহিনী গড়ে তুলে হাসু-কাসুরা টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি আর ভাড়াটে খুন-খারাবির কর্মকাণ্ডে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে এ এলাকার ডিস ব্যবসায়ী জামিল হোসেনকে তার বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করে কাসু নিজে। এরপর প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাবুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে সে বনে যায় বাহিনীর প্রধান। র্যাব ও ডিবির অভিযানে আবুল হাসেম হাসু অস্ত্রসহ দুবার গ্রেফতার হয়। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে দিব্যি অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করে যাচ্ছে।
হাসু ও কাসুর যত মামলা : হাসু, কাসুসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলানগর, মিরপুর, কাফরুলসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত দুই ডজন মামলা আছে। এর মধ্যে খুন-খারাবি, ডাকাতি, অস্ত্র, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা আছে ১৫টি। বাকিগুলো জায়গাজমি জবরদখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ, টেন্ডারবাজি-সংশ্লিষ্ট।
হাসু-কাসু বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলো কাউট্রা বাবুল, লম্বু খোরশেদ, ঠাণ্ডু, সোহাগ, লম্বু কাজল, সুন্দরী সোহাগ, ক্যাশিয়ার হারুন, আলমগীর, আলাল, হেলপার বাদল, নুরু, আবুল কালাম, আবেদ আলী, ফারুক হোসেনসহ ২০-২২ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার ডাকসাইটে সন্ত্রাসীর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, হাসু-কাসুর অতীত রেকর্ড ভালো নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের দু-তিন বার গ্রেফতার করা হয়। এখনো তারা কড়া নজরদারির মধ্যে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পুলিশের কাছে আসেনি।