ছেলেসহ ভারতে পালিয়ে গেছেন রাগীব আলী

সিলেটের বহুল আলোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাই গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশের পর ওই দিন বিকেলেই সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তাঁরা ভারতে চলে যান। তাঁদের সঙ্গে আরো চারজন ছিল বলে জানা গেছে। সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা রাগীব আলীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিলেটের তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভূমি আত্মসাতের আলোচিত দুটি মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলী, তাঁর ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বুধবার সকালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। এই খবর পেয়েই রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে দেশ ছাড়েন। এ দুজন ছাড়াও জামিরুল হক তালুকদার, কামরুল হাসান, সৈয়দ আজমান ও সাইদুল ইসলাম নামে আরো চারজন তাঁদের সঙ্গে ভারত গেছে। তারা রাগীব আলীর স্বজন বলে জানা গেছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে রাগীব আলী, তাঁর ছেলেসহ ছয়জন জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে যান। ওই সূত্রে জানা গেছে, রাগীব আলী, তাঁর ছেলে আব্দুল হাই এবং আরো চারজন বুধবার বিকেল ৩টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে জকিগঞ্জে যায়। রাগীব আলীর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছয়টি পাসপোর্ট নিয়ে জকিগঞ্জ সীমান্তের কাস্টমস ইমিগ্রেশন অফিসে আসে। বিকেল ৫টার দিকে ছয়জন নৌকা দিয়ে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে ভারতে চলে যায়। এদিকে রাগীব আলীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে গতকাল সকালে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল জকিগঞ্জ কাস্টমস ও থানা পরিদর্শনে যায়। বিকেল ৫টার দিকে যোগাযোগ করা হলে জকিগঞ্জে অবস্থানরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালতের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার আগেই গোপনে দেশত্যাগ করেন রাগীব আলী। তিনি তাঁর ছেলেসহ অন্য চারজনকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, মন্ত্রণালয়ের কাগজ জালিয়াতি করে তারাপুর চা বাগান নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার অভিযোগে ২০০৫ সালে সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আব্দুল কাদির কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করেন। এর মধ্যে একটি মামলায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাইকে আসামি করা হয়। অন্য মামলায় রাগীব আলী, তাঁর স্ত্রী-পুত্র, স্বজন মোস্তাক মজিদ ও তারাপুর চা বাগানের মন্দিরের সেবায়েত পঙ্কজ দাশগুপ্তসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। দীর্ঘদিন মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর সমপ্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মামলা দুটির তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে পুলিশকে এবং পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে গত ১০ জুলাই আদালতে এই দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। আসামিদের মধ্যে রাগীব আলীর স্ত্রী মৃত্যুবরণ করায় অভিযোগপত্র থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। গত বুধবার অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাগীব আলী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা নাকচ করে ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আশির দশকে তারাপুর চা বাগান জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাই। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায়ে তারাপুর চা বাগানে রাগীব আলীর দখলদারিত্ব অবৈধ ঘোষণা করে ছয় মাসের মধ্যে সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। রায়ে বাগানের সব অবকাঠামো ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে সেখানে চা বাগান করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের জেলা প্রশাসন গত ১৫ মে অভিযান চালিয়ে চা বাগানের ৪২২ দশমিক ৯৬ একর ভূমির মধ্যে ৩২৩ একর ভূমির দখল দেবোত্তোর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেন। এদিকে নির্দিষ্ট ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও রাগীব আলী স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় জেলা প্রশাসন সমপ্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সব স্থাপনা অপসারণের নোটিশ দেয়। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত না করায় গত ২ আগস্ট প্রশাসন তারাপুরের বাসাবাড়ি ছাড়তে উচ্ছেদ নোটিশ দেয়। আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে তারাপুর না ছাড়লে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।