ছেলের হাত থেকে বাঁচতে মায়ের জিডি

মা-বাবার বৃদ্ধ সময়ে একমাত্র আশ্রয় স্থল তাদের সন্তান। যে সন্তানকে মা নিজের বুকে আঁকড়ে রেখে বড় করে, সেই সন্তানই যখন মাকে হত্যার হুমকি দেবে, এটা কখনো ভাবতে পারেনি বিধবা মা কুলছুম বেগম।
বয়সের ভাড়ে সাধারণ জীবন যাত্রা থেমে গেছে তাঁর। নিজ সন্তানের কাছে ঠাঁই না পেয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন নিজে বাড়ী করে আশ্রয় নিয়েছেন নাতনী শান্তা ও সফুরার কাছে। নাতনী সফুরা আর শান্তাকে নিয়েই তার এখন বেঁচে থাকা। যে সন্তানের ভয়ে নিজের স্বামীর বসত ভিটা ছেড়ে নাতী-নাতনী কে নিয়ে থাকেন সেই সন্তানই এখন তাঁর বেঁচে থাকার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে অবাধ্য সন্তানের টাকা দিতে অস্বীকার করলে অবশেষে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তাঁর সন্তান।
হত্যার হুমকি পেয়ে কুল কিনারা না পেয়ে অবশেষে কুলছুম বেগম শুক্রবার (২২ জুলাই) রাতে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। জিডি নং- ৭৩২। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সদরের ওয়াপদা মোড়ে মৃত পরশ উল্লাহ শেখের স্ত্রী কুলছুম বেগম (৭০)। আর ঐ অবাধ্য সন্তানের নাম ঈমান আলী শেখ।
থানা সূত্রে জানা যায়, তার ছেলে ঈমান আলী শেখ ও মেয়ে মৃত কমেলা বেগম। ছেলে ঈমান আলী শেখ বিভিন্ন সময় টাকার জন্য মাকে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল। তার উপর নির্যাতনের কারণে বৃদ্ধা তার নাতনী শান্তা ও সফুরাকে নিয়ে আলাদা বাড়ী করে বসবাস করছে। বর্তমানে ঈমান আলীর কোন জমি না থাকায় টাকার জন্য তার মাকে চাপ দিচ্ছে। অবশেষে গত ২১ জুলাই টাকা দিতে অপারগতা স্বীকারের কারণে ছেলে ঈমান আলী ও নাতী ছেলে মিলন শেখ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
বৃদ্ধা কুলছুম বেগম বলেন, প্রায় ৩০ বছর হলো আমার স্বামী মারা গেছে। তার মৃত্যুর পর থেকেই আমার ছেলে ঈমান আলী বিভিন্ন সময়ে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে এখন নি:স্ব হয়েছে। এখন যেটেকু আছে সেটুকু বিক্রি করে আমাকে টাকা দিতে বলে। আমি টাকা দিতে না চাওয়ায় আমাকে তারা মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এসময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবারা আমি টাকা না দিলে আমার ছেলে ও নাতনীরা আমাকে যে কোন সময় মেরে ফেলতে পারে।
বৃদ্ধার নাতনী শান্তা জানান, আমার নানীর যে সম্পত্তি এখন রয়েছে তা যে কোন সময়ই আমার মামা তার লোকজন নিয়ে জোড়পূর্বক সম্পত্তি লিখে নিতে পারেন।
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম পিপিএম সন্তানের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মায়ের সাধারণ ডায়েরী করার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃদ্ধা কুলছুম বেগম তাঁর সন্তানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।