English Version
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০১৬ ১৮:২০

ওসি বলেন এএসপি কি তোর বাপ

হৃদয় দাশ শুভ
ওসি বলেন এএসপি কি তোর বাপ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রথম আলো সাংবাদিক ওসির সাথে যোগাযোগ না করে এএসপি সার্কেলের কাছ থেকে তথ্য নেয়ায় অফিসার ইনচার্জ কর্তৃক সাংবাদিককে অকথ্য গালিগালাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মুজিবুর রহমান রঞ্জু জানান, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৪.১৮ টায় তাকে ওসির ব্যক্তিগত মুঠোফানে বলেন, কোন কিছুই হলেই এএসপি (সার্কেল) এর বক্তব্য নেয়া, তাকে বলে দেয়া কেন?

এএসপি (সার্কেল) কি তোর বাপ! (আরও অসালীন ভাষা) ফাজলামির জায়গা পাস না বলে গালিগালাজ করে ফোন রেখে দেন। আকস্মিকভাবে কোন কারণ ছাড়াই কমলগঞ্জের একজন সিনিয়র সাংবাদিককে থানার ওসি ফোন করে এভাবে গালিগালাজ করে হুমকি দেয়ায় কমলগঞ্জসহ গোটা মৌলভীবাজার জেলায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, গত ১২ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করেছিল বখাটেরা। এ ঘটনায় ছাত্রীর ভাই প্রতিবাদ করলে বখাটেরা তাকে (ছাত্রীর ভাইকে) মারধর করে। এ ঘটনায় ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশের পক্ষে সরেজমিন কোন তদন্ত হয়নি। এ ব্যাপারে বৃহষ্পতিবার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোল্লা মো. শাহীন বৃহষ্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষক, ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্যাতিতা ছাত্রীর বক্তব্য গ্রহণ করেন।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়, ছাত্রীর ভাই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও থানা থেকে কোন প্রকার তদন্ত না হওয়ায় পরবর্তীতে নিজে এসে তদন্ত করায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোল্লা মো. শাহীন কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

এ প্রেক্ষিতেই ক্ষিপ্ত হয়ে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল হাসান তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন (০১৭১৬-৩৩৪১১৭) থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৪.১৮ টায় এ প্রতিবেদককে ফোন করে গালিগালাজ করে হুমকি দেন।

থানার ওসির এ ধরণের আচরণে এই প্রতিবেদক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোল্লা মো. শাহীন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালালকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানায়।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জের মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে থানার সিনিয়র এস আই জাহিদুল হক ফোন রিসিভ করে জানান, কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন।

তবে সাংবাদিকের সাথে কিছুটা মনোমানিল্য হয়েছে এটা তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোল্লা মো. শাহীন জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন ওসি ছুটি থেকে ফিরে আসলেই এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তিনি দেখবেন। ঘটনার পর থেকে কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার জেলা সদরের সাংবাদিকরা ওসির অপসারণ দাবী করেন।

একই সাথে এই ঘটনার জন্য নিন্দা জানান, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুব, সাধারণ সম্পাদক এস, এম, উমেদ আলী, মৌলভীবাজার জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি বকশী ইকবাল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ, মৌলভীবাজার টেলিভিশন সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সভাপতি রাধাপদ দেব সজল সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত, একুশে টেলিভিশনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্ত্তী, আরটিভি স্টাফ রির্পোটার(মেূলভীবাজার) চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমীন মিল্টন, চ্যানেল নাইন এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ইমন দেব চৌধুরী, মাইটিভির মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার দে, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব, কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি, কমলগঞ্জ রিপোটার্স ইউনিটি, ইটিভি প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তী, , এশিয়ান টিভি মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আব্দুল হামিদসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে কমলগঞ্জ থানার ওসিকে প্রত্যাহারের জোর দাবী জানান।