পাঁচ জঙ্গিরই পরিচয় পাওয়া গেছে, তিন জনের সামাজিক পরিচয় নিয়ে ফেসবুকে ঝড়!

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলাকারী পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে আইএস দাবি করেছে, এঁরাই হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আর এখন এই রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে দুজন আবার দীর্ঘ সময় নিখোঁজ থাকায় তাঁদের পরিবার থানায় জিডিও করেছিল।
সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে জিম্মি উদ্ধারে শনিবার ভোরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে নিহত ছয়জনের সবাইকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অভিযানের সময় একজনকে আটক করার কথা বলা হলেও রোববার পর্যন্ত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ রোববার জানিয়েছে, নিহত এই ছয়জনের মধ্যে ওই রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের কর্মী সাইফুল ইসলাম একজন। তাঁর পরিবারের দাবি, ঘটনার শিকার হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার পর সাইফুল তাঁর ভগ্নিপতিকে ফোন করে বলেছিল, তাঁরা বন্দুকের মুখে জিম্মি অবস্থায় আছেন।
এর আগে শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিহত পাঁচজনের লাশের ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে বলেছিল তাঁদের নাম আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। কিন্তু বাস্তবে এঁদের কারও নাম মেলেনি। আর হামলাকারী জঙ্গি হিসেবে যে পাঁচটি লাশের ছবি পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ওই রেস্তোরাঁর কর্মী সাইফুলের ছবিও ছিল।
এদের মধ্যে প্রকৃত পরিচয় পাওয়া পাঁচ জন হচ্ছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ। স্কলাসটিকা থেকে ও লেভেল পাস করা মীর সামেহ মোবাশ্বের। ঢাকার টার্কিশ হোপ স্কুল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলাম।বগুড়ার একটি মাদ্রাসার ছাত্র খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।নিহত পঞ্চম হামলাকারী শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ি গ্রামে।
পুলিশের দাবি, এর আগে উত্তরবঙ্গে অন্তত তিনটি হত্যায় জড়িত বগুড়ার খায়রুলই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্বে ছিল।
সন্দেহভাজন যে হামলাকারীর পরিচয় জানা যায়নি তাঁর সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে বিভিন্ন তথ্য দেখা গেছে। ওই সব তথ্য যাচাই করা যায়নি।
রোহান ইবনে ইমতিয়াজ
গুলশানে নিহত এক সন্ত্রাসীর ছবির সঙ্গে যে তরুণের চেহারার সাদৃশ্য পাওয়া গেছে, সে রোহান ইবনে ইমতিয়াজ। রোহানের বাবা এস এম ইমতিয়াজ খান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ও সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। রোহানের মা শিক্ষিকা। দুই ভাইবোনের মধ্যে রোহান বড়। ঢাকার স্কলাসটিকা থেকে এ লেভেল শেষ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে রোহানের বাবা বেশ প্রভাবশালী। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সংগঠনেরও সদস্য তিনি। মা-বাবা ও সহপাঠীদের সঙ্গে ফেসবুকে তার যে ছবি দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমাক-এর প্রকাশিত ওই জঙ্গির মিল খুঁজে পেয়ে পরিচিত অনেকেই স্তম্ভিত, মর্মাহত।মা-বাবার সঙ্গে ফেসবুকে যেসব ছবি রয়েছে, তাতে নিহত ওই সন্ত্রাসীর সঙ্গে ছেলেটির মিল থাকার কথা অনেকেই বলেছেন।
গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে রেডিও প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন রোহানের বাবা ইমতিয়াজ। নির্বাচন উপলক্ষে তখন স্থানীয় সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোটারদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিতে ইমতিয়াজকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। ইমতিয়াজ খানের নির্বাচনী প্রচারপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া–বিষয়ক সম্পাদক, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাবা-মার সাথে রোহানের ছবি
রোহানের বাবা নিজের ফেসবুক থেকে গত জানুয়ারি মাসে মা ও ছেলের একটি যুগল ছবি পোস্ট করে ইংরেজিতে লিখেছিলেন, ‘বাবা, তোমার মা অসুস্থ। দয়া করে ফিরে এসো।’ গত ১১ জুন আকুতি জানিয়ে আবার লিখেছেন, ‘বাবা, তুমি কোথায়? প্লিজ, ফিরে এসো।’ এসব স্ট্যাটাস থেকে এটি পরিষ্কার যে রোহান পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বিচ্ছিন্ন ছিল।
রোহানের খালা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে রোহান নিখোঁজ ছিল। তার সন্ধান চেয়ে পুলিশ, র্যাব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছি আমরা। কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু জানতে চাই, সরকার কেন আমাদের নিখোঁজ ছেলেকে বের করতে পারল না।’
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর বলেন, রোহান নিখোঁজ হয়েছেন উল্লেখ করে গত ৪ জানুয়ারি থানায় জিডি করা হয়েছিল। জিডিতে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে রোহান আর বাসায় ফেরেনি। পরে তদন্তে দেখা যায়, রোহান জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলে, যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারেন, সে জন্য বিমানবন্দরেও জানানো হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের একজন নেতার ছেলেও হামলায় জড়িত থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এদের সবারই বাংলাদেশে একটা অবস্থান রয়েছে। সবারই বাংলাদেশে বাবা-মা আছে, তাঁরা (বাবা-মা) জঙ্গি না, এটা নিশ্চিত। এদেরকে বাবা-মা হয়তো খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। তারা যে জঙ্গি সংগঠনে জড়িত হয়েছে, তাদের বাবা-মা জানতেন না, এখন জানলেন।’

মীর সামেহ মোবাশ্বের
মীর সামেহ মোবাশ্বেরকে নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তার বাবা মীর এ হায়াৎ কবির একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরি করেন। মা একটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক।
এ বছরেরই ঘটনা। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটা। কোচিংয়ে যাওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে করে বের হয় মোবাশ্বের। বনানী ডিওএইচএসে পরিবারের সঙ্গে থাকে সে। স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ও-লেভেল পাস করে এ-লেভেলে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্যই কোচিং। গুলশানের একটি কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে যানজটে আটকে পড়ে তার গাড়ি। গাড়িচালককে ছয়টার দিকে কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাকে আনতে বলে সে নেমে যায় গাড়ি থেকে। তারপর বেমালুম হাওয়া। চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের সদস্যরা। ছেলেটিকে কি অপহরণ করেছে কেউ, নাকি নিজে থেকেই কোথাও গিয়ে লুকিয়েছে? ওই দিনই বাবা গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেন। গত ৭ মার্চ মানবজমিন পত্রিকায় এ নিয়ে একটি খবরও প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ ছেলেটিকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিল। পরে তারা গুলশান এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায়, গাড়ি থেকে নামার পর একটি রিকশা নিয়ে সে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের দিকে চলে যাচ্ছে।
ওই খবরের তথ্য অনুযায়ী, ওই জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থাকার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল জানান, ঘটনার দিন ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ছেলেটির মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই সময় একটি সূত্র দাবি করে, সে সম্প্রতি ধর্মীয় উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
বাবা হায়াৎ কবির বলেন, ‘মোবাশ্বের বোধবুদ্ধিতে কিছুটা পিছিয়ে ছিল। আমার মন বলছিল ও কারও খপ্পরে পড়েছে। আমরা সচেতন অভিভাবক ছিলাম। তারপরও আমার সুরক্ষিত বাড়ি থেকে বাচ্চাকে কেড়ে নিল। ওরা কত শক্তিশালী যে কেউ ধরতে পারছে না? আজ আমারটা নিয়েছে, কাল আর কারও কপাল আমার মতো হবে। এটা তো একটা জাতীয় দুর্যোগ।
তিনি বলেন, মোবাশ্বের নিখোঁজ হওয়ার পরে সেখানকার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গুলশানের আগোরার পাশে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে সে একটি রিকশায় করে বনানী ১১ নম্বরের দিকে যাচ্ছে। এরপর মুঠোফোনে বা অন্য কোনো মাধ্যমে সে পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
হায়াৎ কবির বলেন, পত্রপত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে, তার সঙ্গে ছেলের চেহারা মেলে। নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমেই তিনি গুলশান থানায় জিডি করেন। এরপর ডিবি, র্যাব ও অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সংস্থাগুলো তাঁকে জানিয়েছে, যেদিন মোবাশ্বের নিখোঁজ হয়েছেন তার দু-এক দিনের মধ্যে গুলশান-বনানী এলাকা থেকে আরও চার-পাঁচটি ছেলে নিখোঁজ হয়। মোবাশ্বেরের কম্পিউটারে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর কিছু যোগাযোগের তথ্য-প্রমাণ পায় তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই তাঁকে খুঁজে বের করতে পারেনি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের ধারণা ছিল, মোবাশ্বের দেশের বাইরে কোথাও চলে গেছেন। যদিও তাঁর পাসপোর্ট বাসাতেই ছিল।

নিবরাস ইসলাম
নিবরাস ইসলাম নামের আরেক তরুণের ব্যক্তিগত পটভূমিও বেশ জ্বলজ্বলে। গুলশানের ঘটনায় আইএসপিআরের প্রকাশিত রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা এক সন্ত্রাসীর ছবির সঙ্গে ফেসবুকে প্রকাশিত নিবরাসের ছবির সাদৃশ্য রয়েছে। নিহত ওই সন্ত্রাসীকে এই নিবরাস বলে শনাক্ত করেছেন অনেকে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে একজন বলেছেন, এত মিষ্টি ছেলেটা কীভাবে পারে গুলশানে জঙ্গি অ্যাটাক দিতে! এখানে নিবরাসের নিষ্পাপ চেহারার সঙ্গে ওই নৃশংসতার তুলনা করে আফসোস করা হয়েছে।
মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলেন নিবরাস ইসলাম। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নিবরাস বড়। বাসা ঢাকার উত্তরায়। তাঁর নিকটাত্মীয়রা সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে চাকরি করেন। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, নিবরাস যে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, তা-ই জানত না পরিবার।
ফেসবুকে নিবরাসের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে যেতে যেতে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলছিল সে। এতে এটা স্পষ্ট যে পারিবারিক অবস্থানের দিক দিয়ে সমাজের সচ্ছল শ্রেণিতেই ছিল তার অবস্থান। সে যে একসময় অত্যাধুনিক পরিবেশে বিচরণ করত, ফেসবুকে দেও য়া বন্ধুদের সঙ্গে তোলা কিছু ছবি তা প্রমাণ করে। বলিউড তারকা শ্রদ্ধা কাপুরের ভক্ত এই তরুণ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রিয় তারকার সঙ্গে তার হাত মেলানোর মধুর অনুভূতিও প্রকাশ করেছে।

খায়রুল ইসলাম
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ছয়-সাত মাস ধরে উত্তরবঙ্গের অন্তত তিনটি হত্যাকাণ্ডে খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলের নাম এসেছে। তাঁকে তখন থেকেই খোঁজা হচ্ছিল। খায়রুল যে গুলশানে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চুতিনগর ইউনিয়নের ব্রিকুষ্টিয়া গ্রামের দিনমজুর আবু হোসেনের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে খায়রুল বড়। ব্রিকুষ্টিয়া দারুল হাদিস সালাদিয়া কওমি মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়েছিলেন খায়রুল। এরপর ডিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে তিনি দাখিল ও ২০১৫ সালে আলিম (এইচএসসি সমমান) পাস করে ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হন।তাঁর বোনের দাবি, তাঁরা জানতেন, তাঁর ভাই ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।এরপর আর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি তিনি।
খায়রুলের মা পেয়ারা বেগম বলেন, এক বছর ধরে খায়রুল নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে হারানো বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য আট-নয় মাস আগে গিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু থানায় জিডি করতে হবে শুনে তাঁরা আর বিজ্ঞপ্তি দেননি। তাঁর মা পেয়ারা বেগম দাবি করেন, এক বছর ধরে খায়রুল নিখোঁজ ছিলেন।
চুতিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান আলী বলেন, গণমাধ্যমে ছবি দেখেই বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা খায়রুলকে চিনতে পারেন। গ্রামে জানাজানি হয়। রোববার বিকেলে পুলিশ একটি ছবি নিয়ে বাড়িতে আসে। তাঁর বাবা-মা প্রথমে ছবিটি চিনতে পারছেন না বলে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা খায়রুলের ছবি দেখতে চাইলে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পুলিশ খায়রুলের মা-বাবাকে আটক করেছে।

শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পঞ্চম সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (২৫)। তার বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ি গ্রামে।
পরিবারের দাবি, ছয় মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিল নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম। দীর্ঘদিনের জন্য ‘তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বিদায় নেন। এরপর আর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।
সোমবার বিকেলে এএসপি গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শফিকুলের বাড়ি গেলে পরিবারের সদস্যরা জানান, শফিকুল ঢাকার আশুলিয়ায় চাকরি করেন, সেখানে আছেন। পরে ঘরের ভেতর বাঁধিয়ে রাখা ছবির সঙ্গে পুলিশ তাদের কাছে থাকা ছবি মিলিয়ে দেখে। একপর্যায়ে শফিকুলের লাশের ছবি তাঁর বাবা ও বড় ভাইকে দেখালে তাঁরা ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশ বাবা ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধুনট থানায় নিয়ে আসে।শফিকুলের বাবা ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শফিকুলের বাবা বদিউজ্জামান (৫৫) ও বড় ভাই আসাদুল ইসলাম (৩২) দুজনই কৃষিশ্রমিক। বদিউজ্জামান বলেন, রোববার গ্রামের লোকজন বলাবলি করছিল, টেলিভিশনে শফিকুলের ছবি দেখাচ্ছে। সে ঢাকায় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে মারা গেছে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করিনি।
ভাই আসাদুল ইসলাম জানান, শফিকুল ধুনটের গোঁসাইবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও গোসাইবাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। পরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। সর্বশেষ ডিসেম্বর শফিকুল বাড়িতে আসেন। এরপর শফিকুল আর বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
ঢাকা মহানগর ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার অভিজাত এলাকায় বসে কেউ একজন এই হামলার সমন্বয় ও পরিকল্পনা করেছেন বলে তাঁরা মনে করছেন। যার কারণে বগুড়ার নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন মাদ্রাসাছাত্রের সঙ্গে ঢাকার অভিজাত পরিবারের চারটি ছেলের যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে।