জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ৫ মিনিট

সোমবার ঘড়ির কাটায় তখন বিকাল ৫টা। স্থান রাজধানীর কলাবাগান লেক সার্কাসের লাল ফকিরের মাজার এলাকার ৩৫ নম্বরের আছিয়া নিবাস। টার্গেট ৭ম তলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থানরত বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাজ মান্নান। আচঙ্কা ১০-১২ জন বিভিন্ন বয়সী তরুণ ও যুবক বাড়িতে ঢোকে পড়েন।
জুলহাজ মান্নানের নামে পার্সেল রয়েছে, তাকে এটি পৌঁছে দিতে দ্বিতীয় তলায় যাব। তখন আমি বলি, আগে স্যারকে জিজ্ঞেসা করে আসি যে তার নামে কোনো পার্সেল আসবে কী না? আমি তখন দ্বিতীয় তলায় যাই। এরপর জুলহাজ স্যার দরজা খুলে দেন। আমি জিজ্ঞেস করি স্যার, আপনার কোনো পার্সেল আসবে কি? কয়েকজন এসে বলছেন যে আপনার নামে পার্সেল রয়েছে। তখন স্যার বলেন, না আমার নামে তো কোনো পার্সেল আসার কথা না। এমন সময় পেছনে তাকিয়ে দেখি তিনজন আমার পিছু নিয়ে উপরে উঠে এসেছে। আমি তাদের বলি, আপনারা উপরে এসেছেন কেন? আপনাদের না বলেছি নিচে অপেক্ষা করার জন্য? স্যার বলেছেন কোনো পার্সেল আসার কথা না। যান আপনারা চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ কথা বলার পর একজন বড় ধারালো অস্ত্র বের করে আমার মাথার বাম পাশে চোখের উপরে কপালে কোপ দেয়। এরপর আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার চোখ রক্ত দিয়ে ঢেকে যাওয়ায় আর কিছু খেয়াল করতে পারি নাই। শুধু একটি গুলির আওয়াজ শুনেছি। তবে গুলিটি কাকে করা হয়েছে সেটি দেখিনি।’ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড পারভেজ (১৯)এর ভাষ্য মতে এসব তথ্য জানা যায়।
এরপর হত্যাকারীরা জুলহাজ মান্নানকে বেডরুমে এবং তনয়কে ড্রইংরুমে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জোড়া খুনের ঘটনায় অন্তত ছয়জন সন্ত্রাসী অংশ নেয়। প্রথমে তিনজন প্রবেশ করে। এরপর জোর করে আরও তিনজন প্রবেশ করে। আর তারা মোট সময় নেয় পাঁচ মিনিট। মিশন পূর্ণ করে কলাবাগানের ডলফিন গলি দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ সময় কলাবাগান থানার এএসআই মুমতাজ তাদের ঝাপটে ধরলে তারা তাকে কোপায়। এ সময় তিনি সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজনের ব্যাগ ও মোবাইল রেখে দেন। সোমবার সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া জানান এটি ‘পরিকল্পিত টার্গেট কিলিং’।
নিহত জুলহাজ মান্নান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই এবং মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অফিসার। নিহত আরেকজন জুলহাজের বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়।