আদালত অবমাননার দায়ে দুইমন্ত্রীকে অর্থদণ্ড

আদালত অবমাননার অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক-মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আট সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানি শেষে রোববার এ আদেশ দেন।
রায় অনুসারে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে লিভার ফাউন্ডেশন ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে এই টাকা প্রদান করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এর আগে দুই মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ না করে এ রায় প্রদান করেন।
আদেশের পর দুই মন্ত্রীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলাম। আদালত সেটা গ্রহণ করেনি। আদালত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে সাতদিন করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকবে কি-না জানতে চাইলে বাসেত মজুমদার বলেন, এটা সংক্ষিপ্ত আদেশ। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বলা যাবে। এর আগে আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাজির হন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শুনানি শেষে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গত রোববারও আদালতে হাজির হয়েছিলেন এ দুই মন্ত্রী। সেদিন শুনানি শেষে ২৭ মার্চ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।
গত ৫ মার্চ রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক গোলটেবিল আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ করেন দুই মন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রধান বিচারপতি পদে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানির দাবি জানান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতি তার আসনে থাকতে চাইলে 'অতিকথন' বন্ধ করা উচিত বলেও পরামর্শ দেন।
তাদের ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তবে রায়ের আগের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুই মন্ত্রীর ওই বক্তব্য সরকারের নয়, তাদের নিজস্ব বলে জানান।
এরপর ৮ মার্চ মীর কাসেমের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ১৪ মার্চ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ওইদিন আদালত বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে দুইমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা স্তম্ভিত। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল।
সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের পর ১৪ মার্চ প্রথমে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে একই দিন আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এরপর গত ১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আদালতে উপস্থিত হলেও দেশের বাইরে থাকায় ওইদিন আদালতে হাজির হতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। তবে ওইদিন আইনজীবীদের মাধ্যমে তারা আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত ২০ মার্চ নতুন দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী গত রোববার তারা আদালতে হাজির হন।