দুই ভাইয়ের পরকীয়ায় ঘরছাড়া দুই জা

বগুড়ায় স্বামীদের পরকীয়া ও নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে এক কন্যাসহ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন দুই জা।
আত্মগোপনের ১১ দিন পর মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে।
উদ্ধারকৃতরা হলেন- বগুড়ার কাহালুর বাকরা পানাই গ্রামের কৃষক মানিক মিয়ার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন (৩২), তার মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মনিকা (১৪) ও ভাই শাহিন আলম শানুর স্ত্রী মৌসুমি (২০)।
এ ঘটনায় মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নির্যাতিতা মাহমুদা খাতুন জানান, ১৬ বছর আগে কাহালুর বাকরা পানাই গ্রামের নফিজ উদ্দিনের ছেলে মানিক মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার সুখেই কাটছিল।
স্বামী মানিক মিয়া প্রতিবেশী আরজিনা নামে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া শুরু করলে তাদের সংসার তছনচ হয়ে যায়। বাধা দিলে নির্যাতনের শিকার হন মাহমুদা ও তার মেয়ে মনিকা।
তিনি আরও জানান, তার দেবর শানু প্রায় দুই বছর আগে নন্দীগ্রামের আমরা বোহাইল গ্রামের মৌসুমিকে বিয়ে করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই শানু একই এলাকার সাজেদা নামে এক নারীর প্রেমে পড়ে। এতে বাধা দিলে মৌসুমিও নির্যাতনের শিকার হন।
দুই ভাই মানিক ও শানু পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়লে দুই সংসারে অশান্তি নেমে আসে। নির্যাতিত হতে থাকেন মাহমুদা ও মৌসুমি।
এক পর্যায়ে মাহমুদা ও মৌসুমি স্বামীদের নির্যাতন থেকে বাঁচার পরিকল্পনা করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মৌসুমি নন্দীগ্রামের বোহাইল গ্রামে মা শাহিনুর বেগমকে দেখার নাম করে বাড়ি থেকে বের হন। সঙ্গে নেন জা মাহমুদা ও তার মেয়ে মনিকাকে।
তারা সেখানে না গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরির আশায় গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার বাইমাইল গ্রামে মৌসুমির ভগ্নিপতি আলমের ভাড়া বাসায় যান। আলম তাদের আশ্রয় দিতে রাজি না হলে তারা তিনজন এক রশিতে আত্মহত্যার হুমকি দেন।
তখন আলম বাধ্য হয়ে তাদের আশ্রয় দেন। বিষয়টি কাউকে না জানাতে অনুরোধ এবং গার্মেন্টসে চাকরি খুঁজতে থাকেন।
এদিকে মৌসুমির মা শাহিনুর বেগম ২৯ ফেব্রুয়ারি নন্দীগ্রাম থানায় জিডি করেন। এক সপ্তাহ পর ভগ্নিপতি আলম শালিকা মৌসুমি, তার জা মাহমুদা ও মেয়ে মনিকাকে বাসা ছাড়তে তাগাদা দেন।
মাহমুদা ও মৌসুমি জানান, বাড়িতে ফিরলে আরও নির্যাতন ভোগ করতে হবে তাই তিনজন এক রশিতে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন।
এদিকে নন্দীগ্রাম থানায় জিডি করার পর নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান শামীম ইকবাল তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার ও সোর্স নিয়োগ করেন।
ওই তিনজনের অবস্থান নিশ্চিত হবার পর মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার বাইমাইল গ্রামে আলমের বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মাহমুদা, তার মেয়ে মনিকা ও জা মৌসুমিকে উদ্ধার করা হয়।
পরে পুলিশ কাহালুর বাকরা পানাই গ্রামের বাড়ি থেকে মাহমুদার স্বামী মানিককে গ্রেফতার করে। এ সময় ভাই শানু পালিয়ে যায়।
ওসি আরও জানান, মৌসুমির ভগ্নিপতি আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মানিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শানুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উদ্ধার তিনজনকে নিরাপদ হেফাজতে প্রেরণের আদেশ দেবার জন্য মঙ্গলবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া ৫৪ ধারায় গ্রেফতার মানিক মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানান তিনি।